হোম > অপরাধ > চট্টগ্রাম

‘ঘুষ’ ছাড়া ফাইল ধরেন না ভূমি অফিসের আবুল ফজল 

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার) 

নামজারি থেকে শুরু করে বন্দোবস্তি—কক্সবাজারের রামু উপজেলা ভূমি অফিস মানেই যেন হয়রানি। যেকোনো কাজে ভূমি অফিসে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অনেক দিনের অভিযোগ স্থানীয়দের। 

সরকারি ফি যেখানে ৫০ টাকা, সেখানে দিতে হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ। বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযোগ উঠলেও এবার তা এল প্রমাণসহ। আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও। 

নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার সার্ভেয়ার নামজারির ফাইল অনুমোদন দেওয়ার পর তা যায় জারিকারক আবুল ফজলের কাছে। সেখান থেকে নোটিশ জারি করে নিতে হয়। নোটিশ জারি করাতে সরকারি ফি ৫০ টাকা হলেও প্রতি ফাইলে আবুল ফজল ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ঘুষ নেন। 

এই ভূমি অফিসে নামজারি, খতিয়ান যাচাই, বন্দোবস্তি, তদন্তসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা নিতে গিয়ে সেবাপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে নামজারির আবেদন থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মোট ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যদিও সরকারি ফি অনুয়ায়ী ব্যয় হওয়ার কথা ১১৭০ টাকা। 

ভুক্তভোগী মো. জসিম (ছদ্মনাম) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগে আমার তিনটা নামজারির আবেদন ছিল উপজেলা ভূমি অফিসে। সব জায়গায় ঠিকঠাক কাজ হলেও জারিকারক আবুল ফজল নোটিশ জারির ফি বাবদ তিনটা ফাইলে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন।’ 

এদিকে ঘুষ লেনদেন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রামু উপজেলা শাখার সভাপতি মাস্টার মো. আলম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু জারিকারক নয়, ভূমি অফিসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এগুলো তদারকি করার আসলে কেউ নেই। ঘুষ নেওয়া এখন সরকারি ফিতে পরিণত হয়েছে। এই ঘুষ লেনদেন নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অন্যরা আরও সাহস পাবে।’

রামু ভূমি অফিসের জারিকারক মো. আবুল ফজলের কাছে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০০-২০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়। নোটিশ জারি করতে যাওয়ার সময় গাড়ি ভাড়া বাবদ এই টাকা খরচ হয়। সরকারিভাবে এই যাতায়াত খরচ দেওয়া হয় না। তা ছাড়া আমার ভাগ্নে সাংবাদিক গিয়াস এখানে আমার সহকারী হিসেবে কাজ করে, তার খরচও মেটাতে হয়।’ 

নিয়োগ ছাড়াই গিয়াস উদ্দিন এখানে মামা আবুল ফজলের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। জারিকারকের অফিসের দেয়ালে টাঙানো আছে গিয়াস উদ্দিনের মোবাইল নম্বর। তাঁর পরিচয় দেওয়া আছে— জারিকারকের সহকারী। এই গিয়াস উদ্দিনই ভুয়া নোটিশ জারিতে মূল কাজ করেন বলে জানা গেছে। 

এদিকে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও নিয়ে বক্তব্য নিতে গেলে প্রতিবেদকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তথাকথিত সাংবাদিক গিয়াস। পাশাপাশি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য এই প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ারও চেষ্টাও করেন তিনি। 

রামু উপজেলা ভূমি কমিশনার ছুটিতে থাকায় এসব বিষয় নিয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘তদন্ত করে আসল সত্য বের করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রামু উপজেলা প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। আশা রাখি, রামু উপজেলার মানুষ এসব ভোগান্তিতে আর পড়বে না।’ 

এখানেই শেষ নয়। নোটিশ জারি না করেই ভুয়া ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে নামজারির নোটিশ জারিরও অভিযোগ আছে। এ কারণে উপজেলার একাধিক ব্যক্তি ঝামেলায় পড়েছেন।

উপজেলার হাইটুপির বাসিন্দা রদেব বড়ুয়াও পড়েছেন এই একই বিড়ম্বনায়। তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি একটি প্রভাবশালী পক্ষ ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নামজারি করে নিয়েছে। রদেব বড়ুয়া বলেন, ‘ওই নামজারির ভুয়া খতিয়ান বাতিলের জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে মিস মামলা করেছি। কিন্তু বিবাদীপক্ষ মাসের পর মাস সময়ের আবেদন করে যাচ্ছেন। নানা ভোগান্তিতে পড়েছি এই ভূমি অফিসে।’

দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে—এমনটাই দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।

 

মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

ভোটের মাঠে: জয়ের সমীকরণ পাল্টে দেবে পাহাড়ি ভোটার

চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রামে থার্টি ফার্স্ট নিয়ে ৬ নির্দেশনা সিএমপির

খামারে ডাকাতের হানা, অস্ত্র ঠেকিয়ে ১২ গরু লুট

চন্দনাইশে অলিপুত্রের সমর্থনে সরে দাঁড়ালেন জামায়াতের প্রার্থী

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতি অভিভাবকসুলভ নেতৃত্বকে হারাল: চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন: তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা

পেট্রোলিয়াম করপোরেশন: দেড় বছরেও চালু হয়নি ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ