হোম > অপরাধ > এশিয়া

‘আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি করছিল’

ইয়েমেন সীমান্তে সৌদি আরবের সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আজ সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন হয়ে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টার সময় শত শত ইথিওপীয় অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করেছে এমন ৩৮ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এইচআরডব্লিউ ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। 
 
বিবিসি বেশ কয়েকজন অভিবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তাঁরা রাতের অন্ধকারে ইয়েমেন সীমান্ত পার হওয়ার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। অনেকেই যাত্রাপথে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন।     

ইথিওপীয় অভিবাসীর দলে অনেক নারী ও শিশু ছিল, যখন তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকটি অঙ্গ হারিয়েছেন।   

২১ বছর বয়সী মুস্তফা সৌফিয়া মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, গত বছর জুলাইয়ে গোপনে সীমান্ত পার হওয়ার সময় তাঁর ৪৫ জনের দলের বেশ কয়েকজন গুলিতে নিহত হয়। 

লাগাতার গুলি ছোড়া হচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার গায়ে যে গুলি লেগেছে, আমি খেয়ালই করিনি। কিন্তু যখন আমি উঠে হাঁটার চেষ্টা করি, তখন দেখি পায়ের একাংশ আমার সঙ্গে নেই।’ 

এক ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর বাঁ পা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মুস্তফার বাঁ পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি এখন ইথিওপিয়ায় মা-বাবার সঙ্গে থাকেন। কৃত্রিম পা নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে হয়।     

দুই সন্তানের পিতা মুস্তফা বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি আমার পরিবারের জীবন উন্নত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি কী চেয়েছিলাম, তাতে এখন আর কিছু আসে যায় না। এখন আমার মা-বাবাই আমার সব করেন।’    

চলতি বছরের জুনে একদল অভিবাসীর ওপর বোমা হামলা করা হয়। সে দলের একজন ছিলেন ইথিওপীয়ার ওরোমিয়ার বাসিন্দা মুনিরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে তাঁর ভাষ্যে তুলে ধরা হয়ে ঘটনার ভয়াবহতা। 

২০ বছর বয়সী মুনিরা বলেন, সৌদি আরবে প্রবেশের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী দায়ের এলাকায় আটক করে। পরে তাঁদের ইয়েমেনে ফেরত পাঠাতে একটি মিনিবাসে করে সীমান্তের দিকে নিয়ে যায়।’

মুনিরা বলেন, ‘আমাদের ছেড়ে দেওয়ার সময় তারা অরাজকতা সৃষ্টি করে। তারা চিৎকার করে আমাদের বলে, “গাড়িতে থেকো না, বের হও আর দূরে সরো।” তারা আমাদের একই গলিতে আটকে ফেলে। আমার মনে হয়, তারা চায়নি আমরা ছড়িয়ে পড়ে আবার সৌদিতে ফিরে যাই। তখনই তারা আমাদের ওপর মর্টার ছোড়া শুরু করে।’

মুনিরা বলেন, ‘আমরা যখন এক কিলোমিটারের দূরত্বে ছিলাম, তখন সীমান্তরক্ষীরা আমাদের দেখতে পাচ্ছিলেন। অনেক দৌড়ানোর পর আমরা একসঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই আমাদের দলের ওপর তারা মর্টার ছোড়া শুরু করে। আমাদের দলে ২০ জন ছিল, এর মধ্যে মাত্র ১০ জন বেঁচে ফিরেছিল। কিছু কিছু মর্টার পাথরে আঘাত করে আর পাথরের ভাঙা অংশ আমাদের ওপর পড়ে। অস্ত্রটি দেখতে রকেট লঞ্চারের মতো, এর ছয়টি মুখ ছিল। গাড়ির পেছন থেকে অস্ত্র দিয়ে তারা ছয়টি মুখ দিয়েই গুলি করছিল। একসঙ্গে তা বেশ কয়েকটি গুলি ছুড়ছিল। তারা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি করছিল।’

মুনিরা আরও বলেন, ‘আমার যখনই মনে পড়ে, আমার কান্না পায়। আমি দেখেছিলাম, দুই পা হারিয়ে একজন সাহায্যের জন্য ডাকছিল। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, তোমরা কি আমাকে এখানে রেখে যাচ্ছ? দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।

‘আমরা তাঁকে সাহায্য করতে পারিনি। কারণ, আমরা তখন নিজের জীবন বাঁচাতে ছুটছিলাম। অনেক মানুষই তাঁদের অঙ্গ হারিয়েছিলেন।’

বেঁচে ফেরা কয়েকজনের মধ্যে গভীর মানসিক আঘাতের লক্ষণ দেখা গেছে। সীমান্তে কী ঘটেছিল, তা আজও বলতে পারেন না ইয়েমেনের রাজধানীর জাহরা।

বয়স ১৮ বললেও তাঁকে দেখতে বেশ ছোটই মনে হচ্ছিল। মুক্তিপণ ও ঘুষ মিলিয়ে পথে তাঁর প্রায় আড়াই হাজার ডলার খরচ হয়েছিল। কিন্তু পরিণামে সীমান্তে জুটেছিল বেশ কয়েকটি বুলেট।   

এক বুলেটে তাঁর এক হাতের সব কটি আঙল ঝরে পড়ে যায়। তাঁর ক্ষত নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন, উত্তর আর দিতে পারেন না।  

সৌদি আরব বরাবরের মতো ‘নিয়মতান্ত্রিক হত্যার’ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

দেশের টাকমাথার লোকদের বাঁচানোর লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

তাইওয়ানে বিপুল অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন, নিজের বিপদ ডেকে আনছে যুক্তরাষ্ট্র—হুমকি চীনের

জান্তার কাছে এবার মায়ের বেঁচে থাকার প্রমাণ চাইলেন সু চিপুত্র

বন্ডাই বিচে হামলাকারীকে থামাতে গিয়ে প্রাণ হারান এক বৃদ্ধ দম্পতিও!

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

বন্ডাই বিচ ট্র্যাজেডি: ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টে ফিলিপাইনে গিয়েছিল হামলাকারী বাবা-ছেলে