নাটোরে চাঁদা না পেয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফয়সাল হোসেন (১৫) নামের এক কিশোর দোকান কর্মচারীর নখ উপড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আট নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দোকানমালিক আবদুস সালাম।
মামলার পর পুলিশ যুবলীগের দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন নাটোর সদর উপজেলার নবীনগর গ্রামের একরাম হোসেন ওরফে সুমন (৩৫) এবং শহরের চকরামপুর মহল্লার মো. আবির হোসেন (২৬)। এ সময় পুলিশ দোকানমালিকের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।
গত রোববার নাটোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রনি আহমেদ, তাঁর ভাই যুবলীগের সদস্য রবিউল আওয়াল বাপ্পী, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহহিল কাফী শুভসহ আটজনকে আসামি করে নাটোর সদর থানায় মামলা করেন দোকানমালিক আবদুস সালাম। তিনি শহরের কানাইখালী এলাকার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী। অন্য আসামিরা হলেন রনি আহমেদ (৩২), বিপ্লব (২৫), মণি (৩৫) ও রানা (২৭)।
ভুক্তভোগী ও মামলাসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একরাম হোসেন সুমন ও দোকানমালিক আবদুস সালামের মধ্য বিরোধ ছিল। এর জের ধরে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের স্টেশন বাজার এলাকা থেকে আসামি মো. আবির এবং সুমনের সহযোগিতায় রবিউল আওয়াল বাপ্পী ও মোহাম্মদ মনি সালাম এবং তাঁর দোকানের কর্মচারী ফয়সালকে মোটরসাইকেলে তুলে শহরের কানাইখালী এলাকায় ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর ফয়সালকে চোর বলে দাবি করে তার কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা চান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ব্যবসায়ী সালামের সামনেই ফয়সালের বাঁ হাতের তর্জনীর নখ উপড়ে ফেলা হয়।
কিশোরের নখ উপড়ে ফেলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোর ফয়সালকে কয়েকজন জাপটে ধরে রেখেছেন আর যুবলীগ নেতা রবিউল আওয়াল বাপ্পী প্লাস দিয়ে তার নখ উপড়ে ফেলছেন। সোমবার চিকিৎসা শেষে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তাহেরপুরে নিজ বাড়িতে চলে গেছে কিশোর ফয়সাল।
ব্যবসায়ী আবদুস সালাম অভিযোগ করেন, তিনি তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে দিলেও তাৎক্ষণিক তাঁরা আরও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় তাঁরা একটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে তাঁর স্বাক্ষর নেন।
নাটোর জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, এমন ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর রহমান বলেন, খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এবং ভুক্তভোগী ফয়সালকে উদ্ধারের পাশাপাশি ব্যবসায়ী আবদুস সালামের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ফয়সালকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।