ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা শর্ত আর বৈশ্বিক মন্দায় গত ৬ মাসে খাদ্যদ্রব্যের আমদানি ঘাটতির কবলে পড়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে খাদ্যদ্রব্যের আমদানি ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন কমেছে। শূন্যের কোটায় দাঁড়িয়েছে—গম, ভুট্টা, চিনি ও রসুনের আমদানি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, আপাতত চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও রসুনের আমদানি বন্ধ রয়েছে। পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানিও বন্ধের পথে। ইতিমধ্যে গত অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে খাদ্য আমদানির পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন কমেছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪০১ মেট্রিক টন, গম ১৫ হাজার ৪০৮ টন, পেঁয়াজ ৯ হাজার ৮৮৭ টন, চিনি ২ হাজার ৫০০ টন, ডাল ৫ হাজার ৪৬০ টন, মরিচ ৪৪৩ টন, ভুট্টা ৫০ হাজার ১০২ টন ও রসুন ৮৪ টন। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে (জুলাই-ডিসেম্বর) কমে দাঁড়িয়েছে—চাল ৩৫৯ টন, পেঁয়াজ ৪ হাজার ৬৭৫ টন, ডাল ২২ হাজার ৫৩৭ টন ও মরিচ ৮ হাজার ৮৫৯ টন। এছাড়া গম, ভুট্টা, চিনি ও রসুন আমদানি কমে শূন্যের কোটায় দাঁড়িয়েছে।
বেনাপোল আমদানি, রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, গত ২০ জুলাই সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত, ১৯ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রপ্তানি মূল্য ১৫০ ডলার থেকে ৮৫০ ডলারে বৃদ্ধি করে। ১৩ মে থেকে গমের এলসি নিচ্ছে না ভারত এবং গত বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে চিনি আমদানি বন্ধ। এতে সরবরাহ ঘাটতি আর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বর্তমানে বাজারে দ্বিগুণ বেড়েছে এসব পণ্যের দাম। তবে এ অবস্থা উত্তরণে ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে কোটা চুক্তি হয়। এ বার্ষিক কোটা চুক্তিতে ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন ও আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়েছে। কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন বাংলাদেশে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়বে না। এতে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে ও খাদ্য সংকট কমে আসবে। তবে এ এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় জরুরি পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ভাবে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
আমদানি কারক উজ্বল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আমরা চাহিদামত খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।’
নিম্ন আয়ের দিনমজুর আমিনুর বলেন, খাদ্যদ্রব্যের বাজার ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়ের সঙ্গে মিল রেখে সংসার চালাতে পারছি না। দাম কমলে অনেক উপকৃত হব।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিক টন, এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। চালের চাহিদা সাড়ে ৩ কোটি মেট্রিক টনের মতো। সেখানে উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৩ লাখ টন। মজুত বাড়াতে চাল আমদানি করতে হয় বছরে ২৫ লাখ মেট্রিক টনের মতো। চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন।