দুর্ঘটনার পর আলামত হিসেবে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ। কথা ছিল, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে এলেই মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হবে গাড়িটি। পুলিশের কথামতো মালিক আপস-মীমাংসা করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালিককে গাড়িটি বুঝিয়ে দিতে পারলেন না। গাড়ির বদলে তিনি দিলেন টাকা।
মালিককে টাকা দিলেও গাড়ি দেওয়া হয়েছে মর্মে তাঁর কাছ থেকে একটি জিম্মানামা নিয়েছেন তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া। আজ বুধবার সকালে এই রাজশাহীর তানোর থানায় এই ঘটনা ঘটে।
জিম্মানামায় দুজন সাক্ষীসহ সাক্ষর রয়েছে গাড়ির মালিক বেলাল উদ্দিনের। এতে বেলাল উল্লেখ করেন, তিনি গাড়ি বুঝে পেয়েছেন। থানা বা আদালত তলব করা মাত্রই তিনি গাড়ি নিয়ে হাজির হতে বাধ্য থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাস্তবে এ গাড়ির কোনো হদিসই নেই।
বেলাল উদ্দিনের বাড়ি তানোরের বুরুজ গ্রামে। গত ৩ মার্চ তানোরের জিওল এলাকায় তিনি মো. মনজিলা (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা দেন। এতে মনজিলা আহত হন। দুর্ঘটনার পর বেলালের হোন্ডা হিরো স্পিড মডেলের ৮০ সিসির মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নেন উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক উদ্দিন। গাড়ি জব্দ করার বিষয়ে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। মনজিলার চিকিৎসা এবং আপস-মীমাংসার পর এসআই মানিক মালিক বেলালকে গাড়িটি থানা থেকে বুঝে নিতে বলেন। এরপর গত ২৬ জুন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ গণমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিস বৈঠক হয়। সেখানে বেলাল ক্ষতিপূরণ হিসেবে মনজিলাকে ১০ হাজার টাকা দেন।
এরপর থেকেই মীমাংসার কাগজ ও মোটরসাইকেলের কাগজ নিয়ে থানায় ঘুরছেন বেলাল। তবে গাড়ি পাচ্ছেন না। এ নিয়ে গত সোমবার তিনি রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে গাড়ি চাওয়ার কারণে ওসির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তোলেন।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলাল আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁর গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। এ নিয়ে মঙ্গলবারই আজকের পত্রিকার অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ওসিকে একদিনের মধ্যে বেলালকে তাঁর গাড়ি বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজশাহীর এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন।
আজ বুধবার দুপুরে বেলাল জানান, সকালে ওসি তাঁকে ফোন করে ডাকেন। তিনি তানোর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মমেনা আহমেদ এবং তাঁর ভাতিজা মো. শফিকুলকে নিয়ে থানায় যান। সেখানে ওসি জানান, তাঁর গাড়িটি থানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গাড়িটির দাম হতো ৩০ হাজার টাকা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেই গাড়ি মেরামতে খরচ হতো অন্তত পাঁচ হাজার টাকা। তাই গাড়িটির দাম হতো ২৫ হাজার। সেই হিসেবে ওসি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছেন। পরে একটি কাগজ বের করে বেলালের সাক্ষর নিয়েছেন।
তবে ওসি কামরুজ্জামান মিয়া দাবি করেন, বেলালকে তাঁর গাড়িই দেওয়া হয়েছে। ওসি বলেন, প্রথমে গাড়িটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দিতে দেরি হচ্ছিল। পরে গাড়ি জব্দ করা এসআই মানিককে ফোন করে জানা হয়েছে গাড়িটি কোথায়। তারপরই মালিককে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেলাল গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোনো ছবি কিংবা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ আছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এসব নেই। গাড়ির বদলে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি বলেন, ‘এসব প্রশ্ন করবেন না। জবাব দিতে পারব না।’
এসআই মানিক উদ্দিন এখন সিরাজগঞ্জের একটি থানায় কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানিক বলেন, ‘গাড়িটি জব্দ করার কারণে থানায় আমি একটি জিডি করেছিলাম। ওসি সাহেব বিষয়টা জানেন। আমি গাড়ি থানাতেই রেখে এসেছি। তারপর কী হয়েছে জানি না।’
এই গাড়ির বদলে মালিককে টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, ওসি তাঁকে জানিয়েছেন যে সকালে গাড়িটি মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকের জিম্মানামার ছবিও তুলে পাঠিয়েছেন। গাড়ির বদলে টাকা দেওয়া হয়েছে কি না তিনি জানেন না। এ বিষয়ে ওসির কাছে তিনি জানতে চাইবেন।