আখ কিংবা খেজুরের রস নেই। তারপরও কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে গুড়। চিনি, আটা, ক্ষতিকর রং আর বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে এই ভেজাল গুড় বানানো হচ্ছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এমন পাঁচটি ভেজাল গুড়ের কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
আজ বুধবার সকালে বাঘার আড়ানি পৌরসভার শাহাপুর মহল্লার এসব গুড়ের কারখানায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগ কার্যালয়ের উপপরিচালক ইব্রাহিম হোসেন ও র্যাব-৫-এর রাজশাহীর উপ-অধিনায়ক মেজর মুস্তাফিজুর রহমান অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
অভিযান চলাকালে কারখানাগুলোতে খেজুরের রসের কোনো ব্যবহার পাওয়া যায়নি। বরং গুড় তৈরির মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল চিনি, রং, চুন, হাইড্রোজ এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। এসব উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কোনো কারখানার ভেতর দেখা গেছে, চুলায় কড়াইয়ে গুড় তৈরি হচ্ছে। তার পাশেই বিভিন্ন ছাঁচের ওপর ফেলে দেওয়া হচ্ছে আকৃতি। দীর্ঘদিন ধরে এগুলোকে খেজুর বা আখের গুড় হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছিল। এসব গুড় কিনে প্রতারিত হচ্ছিলেন ক্রেতারা।
অভিযানের খবর পেয়ে শাহাপুর মহল্লার আসাদুল নামের এক কারখানার মালিক কারখানা থেকে পালিয়ে যান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁর স্ত্রী লাকি খাতুন। তিনি স্বীকার করেন, এখানে কোনো রসের কারবার নেই। তাঁরা খেজুরের রস ব্যবহার না করে গুড় তৈরি করেন এবং এ গুড় নাটোরের গোপালপুর ও লালপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হয়।
অভিযানে সাল্টু, লাল্টু ও মুক্তার আলী নামের তিনজনকে ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা এবং ইনারুল ইসলাম নামের একজনকে ২০ হাজার ও মো. এনারুল নামের আরেকজনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, গোপন অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে আমরা যে নমুনা পেয়েছি, তাতে গুড়ের চেয়ে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি; খেজুরের রসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ কারণে পাঁচটি কারখানাকেই জরিমানা করা হয়েছে।
র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আখ বা খেজুরের রসের যে গুড়গুলো রয়েছে সেখানে আখের কিংবা খেজুরের রসের কোনো উপস্থিতি নাই। সবই চিনি ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। কারখানাগুলোর প্রায় এক টনের মতো গুড় ধ্বংস করা হয়েছে। চিনি ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে এসব ভেজাল গুড় বাজারে খেজুর বা আখের গুড় হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছিল। এতে সাধারণ মানুষ অজান্তেই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছিলেন। ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে, হতে পারে ক্যানসার। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতি হবে।