পাকিস্তান আমলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী আর পদ্মার ওপারের ভারতের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ ছিল। আনা-নেওয়া হতো নানা ধরনের পণ্য। ১৯৬৫ সালে এই নৌপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কেটে গেছে ৫৮ বছর। দীর্ঘ সময় পর আবার গোদাগাড়ী দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নৌপথ চালু হলো। আজ সোমবার গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জে এই পোর্ট অব কল উদ্বোধন করা হয়। এপারে সুলতানগঞ্জ আর ওপারে ভারতের সাগরদিঘি থানার মায়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।
সকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফলক উন্মোচন করে এই পোর্ট অব কলের উদ্বোধন করেন। এ সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফা, রাজশাহীর বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এ নৌপথে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবোঝাই একটি নৌযান ভারতের মায়া নদীবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর সেখান থেকে একটি পণ্যবোঝাই নৌযান আসে সুলতানগঞ্জে। এই নৌপথটি চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলল। আপাতত শুধু পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হলেও ভবিষ্যতে ইমিগ্রেশন চালুরও পরিকল্পনা আছে। এখানে ইমিগ্রেশন চালু হলে রাজশাহীর মানুষকে ভারতে যাতায়াত করতে আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ কিংবা অন্যান্য স্থলবন্দর ঘুরতে হবে না। পদ্মা পাড়ি দিয়ে সহজেই ভারতে যাওয়া যাবে।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত সব সময় প্রতিবেশী দেশকে গুরুত্ব দেয়। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভারত আন্তরিক। এই নদীবন্দর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেলিম ফকির, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফা, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল প্রমুখ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। সাম্প্রতিককালে বিআইডব্লিউটিএ ওই চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন নৌপথ চালু করতে উদ্যোগী হয়। ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল চুক্তিতে ৫ ও ৬ নম্বর রুট হিসেবে আরিচা-রাজশাহী-সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান পর্যন্ত নৌপথ আছে। তবে পদ্মার নাব্যতা সংকটে পুরো নৌপথটি চালু করা এখন সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই রুটের সুলতানগঞ্জ-মায়া অংশ চালু করা হলো। সুলতানগঞ্জ থেকে আড়াআড়িভাবে মায়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারে বছরের সব সময়ই পানি থাকে।
সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্যে পরিবহন খরচ কমবে।
নৌপথটি চালু করতে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। ২০২০ সালের অক্টোবরেই সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এর কাজ পিছিয়ে যায়। এখন এপারে একটি পন্টুন করে নৌযান চালানো শুরু করা হলো। এই পথ দিয়ে মানুষের যাতায়াতের জন্য ইমিগ্রেশন চালুরও পরিকল্পনা আছে। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন বিভাগও ইতিবাচক এ ব্যাপারে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারাও। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, সড়কপথে পণ্য আনার ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি হয়। সেই খরচ অনেক কমে যাবে নৌপথ ব্যবহার করলে। তাই এই নদী বন্দর এখন ব্যবসায়ীদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।