রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চারটি বড় ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি কাজ আট বছর পরও। বরং তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হয়েছে সময়। নতুন মেয়াদ অনুযায়ী আগামী বছরের জুনে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রথমত ৩৬৩ কোটি টাকা পাস হয়। এই প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা (প্রস্তাবিত) হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়।
পরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আনুষঙ্গিক খরচের দিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাস হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৯ সালে ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুল ও অডিটরিয়াম সংস্কারসহ অন্য স্থাপনাগুলোর কাজ শেষ হলেও চারটি বড় ভবনের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
এর মধ্যে ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হল এবং ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় রূপপুরের বালিশ-কাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল নির্মাণের কাজ পায় দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড। অন্যদিকে ১০ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ পায় কেকে এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কবির সিন্ডিকেট জয়েন্ট ভেনচার।
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্র আরও জানায়, নির্মাণাধীন এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে করোনা মহামারি, এক শিক্ষার্থী ও দুই শ্রমিকের মৃত্যু এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তিন দফায় সময়সীমা আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী জাকির আলম বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। এ সময়ে গাড়ি ও মালপত্র প্রবেশেও সমস্যা হয়। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেও দেরি হয়েছে।’
অন্য ভবনগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানান, যে বাজারমূল্যে টেন্ডার নেওয়া হয়েছিল, সেই মূল্য আর নেই। রড, সিমেন্ট, শ্রমিকের মজুরিসহ সংশ্লিষ্ট জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তাঁরা চাইলেও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম টাকার হিসাব দেখিয়ে কাজ বরাদ্দ নেয়। পরে তারা বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখে। এমনকি অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে রাবি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক এস এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ৯৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এ বছরের শেষভাগে এই হলের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। অন্যদিকে শেখ হাসিনা হলের ৫৫ শতাংশ, একাডেমিক ভবন ও শিক্ষক কোয়ার্টারের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নতুন করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাস হয় গত ২৭ অক্টোবর। যা অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পরদিন প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদন ও সরকারিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছর থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ছয়টি নতুন আবাসিক হল নির্মাণ; শেরে বাংলা ফজলুল হক হল পুনর্নির্মাণ; চিকিৎসাকেন্দ্র, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, জুবেরী ভবনসহ কয়েকটি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন পুনর্নির্মাণ; ইনোভেশন হাব নির্মাণ এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা শুধু প্রস্তাবনা পেশ করেছি। এটা কতটুকু বরাদ্দ আসে, তা সম্পূর্ণ সরকারের ওপর নির্ভরশীল।’
তবে চলমান প্রকল্পের ধীরগতির কারণে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘সিন্ডিকেট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। এখন তা ইউজিসির ওপর নির্ভর করছে। কত সময়ে ও কত বরাদ্দ পাব তা জানা নেই। এ ছাড়া বরাদ্দ পেলেও তা বাস্তবায়ন কবে হবে তার সময়সীমা বলা যাচ্ছে না।’