নোয়াখালীর হাতিয়ায় একটি এনজিও অফিস থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করার পর শংকর সাহা (৪০) নামে এক ঋণগ্রহীতা মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ঋণ না দিয়ে এনজিওর কর্মীরা তাঁকে অপমান করে এবং জোর করে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। তবে এনজিও কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শংকর সাহা উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ষশী চন্দ্র সাহার ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনমজুর শংকর সাহা পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ৮-৯ মাস আগে ওছখালী এলাকার ‘হীড বাংলাদেশ’ এনজিওর শাখা অফিস থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ২ লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করলে আবারও ঋণ দেওয়া হবে—এমন শর্তও দেওয়া হয়েছিল।
নিহতের স্ত্রী রিংকু সাহা বলেন, ২ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর সোমবার বিকেলে নতুন ঋণের জন্য শংকর এনজিও অফিসে যান। এর আগে দুই দিন গিয়েও খালি হাতে ফিরেছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শংকর তাঁকে ফোন করে জানান, এনজিও কর্তৃপক্ষ ঋণ দেবে না এবং তাঁকে অপমান করছে। কিছুক্ষণ পর অফিস থেকে তাঁর ছেলেকে ফোন করে জানানো হয়, শংকর বিষ খেয়েছেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রিংকুর অভিযোগ, অফিসে মানসিক চাপ প্রয়োগ করে তাঁকে অপমান করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে হীড বাংলাদেশের ওছখালী শাখার এরিয়া ম্যানেজার অলক কুমার হালদার বলেন, ‘শংকর ২ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পর বেশির ভাগ কিস্তি পরিশোধ করেছিলেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি দিতে পারতেন না। সম্প্রতি এক আত্মীয় আমাদের ফিল্ড কর্মীকে জানায়, শংকরকে নতুন ঋণ না দিতে। সোমবার শংকর অফিসে আসার আগেই বিষ পান করেছিলেন। পরে অফিসের বাথরুমে বমি করতে শুরু করলে দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, শংকরের পেট থেকে বিষ বের করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিকালে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। ইদুরনাশক বা কীটনাশক সেবনেই তিনি মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা বলেন, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ ও পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।