ঘরের বারান্দায় দুই হাত বাঁধা চার বছরের শিশু আবু তাছিনের। শিশুটি যেন পৃথিবীর আলো-হাওয়ায় মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার হারিয়েছে। বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখন থেকেই শুরু হয় তার অস্বাভাবিক আচরণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আচরণ আরও বেড়ে যায়। দরিদ্র পরিবার চিকিৎসা করাতে না পেরে একসময় থেমে যায়। এখন সেই রোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সারা দিনই বেঁধে রাখতে হয় তাছিনকে।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরে দশাল এলাকার রিকশাচালক সুজন মিয়া ও গার্মেন্টস কর্মী তাসলিমা বেগম দম্পতির সন্তান তাছিন।
পরিবার জানায়, যখনই তাছিনের হাতের বাঁধন খোলা হয়, নিজেই আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে নিজের হাত, মুখ আর শরীর। এমন করুণ দৃশ্য দেখলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো সামর্থ্য নেই তাদের। জীবিকার তাগিদে বাবা ঢাকায় রিকশা চালান, মা কাজ করেন একটি গার্মেন্টসে। এদিকে বাড়িতে তাছিনের দেখাশোনা করেন তার নানি হামিদা খাতুন। বড় কোনো চিকিৎসক না দেখানোয় তার রোগ সম্পর্কে জানা যায়নি।
তাছিনের বাবা সুজন মিয়া বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ঢাকায় রিকশা চালাই। টাকা না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারিনি। যদি উন্নত চিকিৎসা করাতে পারতাম, হয়তো ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারতাম।’
শিশু তাছিনের নানি হামিদা খাতুন বলেন, ‘আমি কষ্ট করে নাতিরে আমার কাছে রেখে লালন-পালন করতেছি। আমার মেয়ে আর জামাই ঢাকায় কাজ করে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন দিন-রাত বেঁধে রাখতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তানজিরুল ইসলাম বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বিকাশ না হওয়ার ফলে শিশু তাছিন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে এটি নিয়মিত চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছে।