ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে টমেটোখেতে ‘মড়ক’ দেখা দিয়েছে। এতে গাছ মরে ঝরে পড়ছে আধা পাকা টমেটো। ধারদেনায় আবাদ করা টমেটোর এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। এমন পরিস্থিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের।
সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের বোররচর গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বিস্তৃত জমিতে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, করলা ও কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সর্বত্রই সবুজের সমারোহ। তবে বাম্পার ফলন হওয়া টমেটোখেতে দেখা দিয়েছে ’মড়ক’। এর কারণে আধা পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকেরা ফেলে দিচ্ছেন। নানা ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও মিলছে না সমাধান।
সাত কাঠা জমিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে টমেটো আবাদের কথা জানিয়ে কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে একবার চারা রোপণ করার পরে সেই চারা মারা গেছে। পরে আবার টমেটোর চারা রোপণ করি। গাছে যখন ফলন এসে পাকতে শুরু করার সময় এল, অজানা রোগে গাছ মরে টমেটো ঝরে পড়ছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ কোনোটাই পাচ্ছি না। অন্তত তাদের পরামর্শ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এবার যে ক্ষতি হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরেও তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।’
একই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এখানে ১১ শতাংশ সমান এক কাঠা। আমি ১৫ কাঠা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। ফলন হয়েছিল দেখার মতো। কিন্তু খেতের অধিকাংশ গাছ মরে গিয়ে টমেটো ঝরে পড়ছে। এসব টমেটো ডোবায় ফেলে দিচ্ছি। টমেটো আবাদ করতে গিয়ে এখনো ৬ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে রয়েছি। এসব আপনাদের বলেও লাভ নেই। আমার মতো সব কৃষকেরই একই সমস্যা। কীভাবে কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
চরাঞ্চলে এবার ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে জানিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম সাথী বলেন, ‘টমেটোগাছে মড়ক লেগেছে শোনার পরপরই চরাঞ্চলে গিয়েছি। খেত পরিদর্শন করে কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে, প্রতিবছর একই জমিতে শুধু টমেটো চাষ করার কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। কৃষকেরা অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করেন। যার কারণে মড়ক অব্যাহত রয়েছে। সেখানকার মাটি পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট কারণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, ‘জেলায় এ বছর ২২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফলনও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। তবে সদর উপজেলার চরাঞ্চলে টমেটোগাছ মরে যাওয়ার খবর শুনে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কৃষকেরা বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলে আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’