ত্রিভুজ সম্পর্কের বিরোধে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজে দফায় দফায় বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সূত্রে জানা গেছে, কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে পছন্দ করে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র। একই ছাত্রীকে প্রথম বর্ষের আরও এক শিক্ষার্থী পছন্দ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে গতকাল সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় দেয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম বর্ষের ছাত্রকে কলেজের একটি রুমে বসিয়ে রাখে। এ সময় কলেজের একটি সভা চলছিল। সভা শেষে মীমাংসার কথা ছিল। এ সময় রুমে বসে থাকা ওই ছাত্র মোবাইলে তার বন্ধু ও পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কলেজে হামলা চালান। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয় নেতারা ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসার একপর্যায়ে চলে যায়।
পরে মহানগর যুবদলের সহসভাপতি আজিজুল হক ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা-কর্মী নিয়ে কলেজের গেটে উপস্থিত হন। তিনি কলেজের গেট খুলে দিতে বললে দারোয়ান অস্বীকৃতি জানান।
একই সময় কলেজের ভেতরে বিএনপি কর্মী স্বপন মিয়া গেটে গিয়ে আজিজুল হককে বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে কলেজে ঢুকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। আপনি একা ঢুকলে আমি গেট খুলে দেব।’ পরে গেট খুলে দিলে তাঁর সঙ্গে থাকা সবাই কলেজ ঢুকে হামলা চালান। এতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে স্বপন মিয়া বলেন, ‘প্রথম দফায় হামলার পর আমরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। তবে আজিজুল হক ও তাঁর লোকজন কলেজে প্রবেশ করে আবারও হামলা করে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করতে চেয়েছিল। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসে।’
অপর দিকে যুবদল নেতা আজিজুল হক বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনে মীমাংসা করার জন্য ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি, বিএনপি নেতা কামাল হোসেনের ছোট ভাই স্বপন কলেজের ভেতরে তার লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় গেটে তালা লাগানো ছিল। আমি গেলে তালা খুলে দিলে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করি।
‘তবে আমার সঙ্গে কোনো লোকজন ছিল না। প্রতিপক্ষের কিছু লোক গেট খুলে দিলে আমার সঙ্গে প্রবেশ করে। এ সময় স্বপনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলার সময় এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
‘এ সময় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তখন আমি স্বপনকে বলি, ওই ছেলে যদি মারা যায়, তাহলে তোমাকে হুকুমের আসামি করে মামলা করব। পরে কর্তৃপক্ষ কলেজ বন্ধ ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি ফিরে যায়।’
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সুলতানা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কলেজে দফায় দফায় হামলার পর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েই এসেছিলাম, পরে একটি পক্ষ আবারও হামলা করে। যে কারণে বিষয়টি বড় আকার ধারণ করে।
‘তবে দফায় দফায় কারা হামলা করেছে, তাদের কাউকেই আমি চিনি না। কয়েক দিন পরপর কলেজে এভাবে হামলা করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে। আমরা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে বসে কথা বলে মীমাংসার চেষ্টা করব। যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে আইনের সহায়তা নেব। বারবার এভাবে বহিরাগতরা হামলা করবে, এটা আর মেনে নেওয়া হবে না।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, এক মেয়েকে দুজন পছন্দ করে—এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে বিষয়টি অন্য পর্যায়ে চলে যায়। হামলার ঘটনায় একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।