ময়মনসিংহের গৌরীপুরে তিন কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বর্ষাকালে হাঁটু পর্যন্ত কাদা আর শুকনা মৌসুমে ধুলাবালির ভেতর দিয়েই চলাচল করতে হয় তাদের। শুধু যাতায়াতই নয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও থমকে গেছে।
গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের হাসনপুর তিন রাস্তার মোড় থেকে উকুয়াকান্দা পর্যন্ত এই তিন কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা দীর্ঘ ১৭ বছরেও কাটেনি। এতে বিপাকে পড়েছেন হাসনপুর, কুতুবপুর ও উকুয়াকান্দা গ্রামের মানুষ। সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন শিক্ষার্থী ও বয়স্করা।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্শ্ববর্তী গ্রাম মনাটি থেকে পরপর দুবার নাজিম উদ্দীন আহমেদ সংসদ সদস্য এবং তাঁর ভাই জয়নাল আবেদীন চারবার ইউপি চেয়ারম্যান হলেও এলাকাবাসীর ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং রাস্তার উন্নয়ন বরাদ্দ লুটপাট করে তিন গ্রামের মানুষকে দেওয়া হয়েছে বিএনপি ট্যাগ।
কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া, ‘জন্মের ৩০ বছরেও আমি এই রাস্তার উন্নয়ন হতে দেখিনি। কিন্তু রাস্তাটি উন্নয়ন করা হয়েছে বলে নেতারা কয়েক দফা বিল উত্তোলন করেছে। ৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম প্রশাসন রাস্তাটি করবে, কিন্তু তারাও করেনি।’
মো. মিজান নামে একই গ্রামের বাসিন্দা বলেন, ‘এই এলাকায় সবজি ও ধানের আবাদ হয়। উৎপাদিত রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে বাজারজাত করা যায় না। তাই সবজির প্রকৃত মূল্যও আমরা পাই না। রাস্তাটি মেরামত হলে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা দারুণভাবে চাঙা হবে।’
একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সুরুজ আলী বলেন, ‘পাশের গ্রাম থেকে আমরা এমপি এবং চেয়ারম্যান পেয়েছি বারবার, কিন্তু কেউ কাজ করেনি। মরার আগে রাস্তাটি হয়েছে, দেখে মরতে চাই। বর্তমান সরকার আমার জীবনের এই ইচ্ছেটুকু পূরণ করবে—এটাই দাবি করছি।’
আমির উদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, ‘কার কাছে কী বলব। গত কয়েক দিন আগে হাসনপুর মোড়ের দিকে কয়েক কোদাল মাটি ফেলে শুনেছি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও যদি এমন অরাজকতা হয়, তাহলে কেমনে রাস্তার উন্নয়ন হবে প্রশ্ন জাতির কাছে।’
হাসনপুর গ্রামের এরমান হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বিএনপির ট্যাগ দিয়ে রাস্তার উন্নয়ন করেনি। যার কারণে কমপক্ষে পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। রাস্তাটির এমন অবস্থা, হাঁটু পর্যন্ত কাদা। এখন মানুষজন রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ করছে; তারপরেও যদি উন্নয়ন না হয় তাহলে আমরা অচিরেই আন্দোলনে যাব।’
বেহাল রাস্তাগুলো সংস্কার ও মেরামতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আমীন পাপ্পা বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। কোন ইউনিয়নে কতগুলো রাস্তা খারাপ, আমার কাছে তথ্য নেই। তবে আপনারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। রাস্তা মেরামতের লক্ষ্যে আমরা মন্ত্রণালয় বরাবর লিখছি। কাজ সম্পন্ন হলে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।’