মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে টানা পাঁচ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে ধানখেতে পানি জমে গেছে। হেলে পড়েছে আধা পাকা ও পাকা ধানের গাছ। কৃষকদের আশঙ্কা, পানিতে ডুবে থাকায় এই ধান আর সোজা হয়ে দাঁড়াবে না, ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৬০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভারী বর্ষণ হয়। দীর্ঘ বৃষ্টিপাতে বোনা আমন ও রোপা আমনের খেত পানিতে ডুবে যায়। কিছু জায়গায় ধানের গাছ পুরোপুরি মাটিতে লেগে শুয়ে আছে, ফলে মাঠে প্রবেশ করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
আজ রোববার দুপুরে রশুনিয়া ইউনিয়নের হিরণের খিলগাঁও, ইছাপুরা, বয়রাগাদী, মালখানগর ও মধ্যপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, খেতে হাঁটু পর্যন্ত পানি, ধানগাছের শীষ পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। বেশির ভাগ ধানগাছ হেলে পড়ায় চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে হেলে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে পাকা, আধা পাকা ও কাঁচা ধান রয়েছে।
ইছাপুরা ইউনিয়নের কৃষক মো. হাবিব বলেন, ‘আর কয়েক দিন পরই ধান কাটার পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ এত বৃষ্টি হবে বুঝিনি। পানি উঠে যাওয়ায় ধান শুয়ে পড়েছে, মনে হচ্ছে, অনেক ধানই ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারব না।’
হিরণের খিলগাঁও গ্রামের কৃষক সালাম শেখ বলেন, পানি না নামলে ধান কাটতে সমস্যা হবে। শ্রমিকের ভাড়াও এখন ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতে কাটার খরচও অনেক বেশি পড়বে।
মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমার জমিতে আধা পাকা ধান। পানিতে পড়ে যাওয়ায় গাছগুলো আর ওঠার মতো নেই। দানা পুরোপুরি হয়নি, এগুলো বাঁচানো সম্ভব নয়, এবার বড় লোকসান হবে।’
বয়রাগাদী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল সাত্তার বলেন, ‘আমি ১৯০ শতাংশ জমিতে ধান বুনেছি, সবই এখন পানিতে। আধা পাকা ধান রক্ষা করা খুব কঠিন হবে। পানি কমলেও গাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, টানা বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানি জমেছে, ধানগাছও নিমজ্জিত হয়েছে। যেসব জমির ধান পরিপক্ব হয়েছে, সেগুলো দ্রুত কেটে ফেললে ক্ষতি হবে না। তবে কাঁচা ধানের কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গাছ শুয়ে থাকলে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি থাকে। তাই কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।