লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি মেঘনায় জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। ফলে শূন্য হাতে জেলেরা ডাঙায় ফিরে আসছেন। প্রতিবছর এমন সময়ে জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র।
রামগতি উপজেলার রামগতির ঘাট, টাংকীর ঘাট, গাবতলির ঘাট, আলেকজান্ডার সেন্টার খাল ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটগুলোতে ইলিশ নেই বললেই চলে। মেঘনায় জেলেদের জালে শুধু ইলিশই নয়, আশানুরূপ অন্য মাছও ধরা না পড়ায় জেলেদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
ইলিশের ঘাটগুলোতে বর্তমানে ইলিশ মাছের তীব্র সংকটের কারণে ইলিশ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মেঘনার উপকূলের হাজার হাজার জেলে এবং ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
রামগতি ঘাটের শ্রমিক মো. জসিম বলেন, আড়তে পর্যাপ্ত ইলিশ না আসলে কত দিন এ পেশা ধরে রাখতে পারব জানি না। পরিবার পরিজনদের মুখে দুমুঠো অন্ন জোগাতে বাধ্য হয়ে নতুন পেশা খুঁজছি।
জেলেদের জালে মাছ না মিলায় জেলে পল্লিগুলোতে শূন্যতা বিরাজ করছে। কোনো কোনো জেলেদের জালে দুই একটা ইলিশ মিললেও তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাইরে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্বল্প পরিমাণ ইলিশ ঘাটে আসলেও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জেলে, আড়তদার ও শ্রমিকসহ অনেকেই বসে বসে পুঁজির টাকা খরচ করছেন। অপরদিকে লকডাউন চলায় এ এলাকার মানুষের চোখে-মুখে এখন অভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রামগতি মাছঘাটের আবদুল ওহাব মাঝি বলেন, বিগত বছরগুলোতে এ সময় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছিল। অথচ এবার সময় অতিবাহিত হলেও জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না।
সেন্টার ঘাটের ফারুক মাঝি বলেন, গাঙ্গে এবার মাছ নাই, আমরা শুধু তেল জ্বালাই আর খাদ্য খাই। এ ছাড়া আর কোনো কাম-কাজ নাই। আয়ের তুলনায় খরচ বেশি।
ইলিশের অকাল সম্পর্কে রামগতির জেলে রফিক মাঝি বলেন, এ সময় জেলার মৎস্য আড়তগুলোতে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকার কথা। কিন্তু এ বছর তা দেখা যাচ্ছে না। এমন আকালের কারণে ৬০০-৮০০ টাকা কেজি দরে ছোট ইলিশ কিনতে হচ্ছে মানুষকে।
রামগতি বাজারের বরফ কলের মালিক মিলন জানান, জেলেরা বরফ কিনতে না এলেও বরফ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন সব সময় চালু রাখতে হয়। এ কারণে বরফ বিক্রি না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, অসাধু জেলেরা নিয়মিত জাটকা ধরায় ইলিশের এ আকাল চিত্র। আবার অনেকে বলছেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়াতে ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশ মাছ আসছে না।