পাকিস্তানের মন্ত্রী আসলে যারা মনে করে বড় জেঠা আইছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আজ শুক্রবার কিশোরগঞ্জের ইটনা রায়টুটি ইউনিয়নের রাজি ঈদগাহ মাঠে বিএনপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে, যারা বলে যুদ্ধ হয় নাই। বাংলাদেশ মানি না। যারা পাকিস্তান থেকে মন্ত্রী আসলে মনে করে বড় জেঠা আইছে, আমি তো তাদের বিরুদ্ধে। এইখানেই আমার যুদ্ধটা।’
তিনি বলেন, ‘আমার নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। আমি সেই দল করি। সেই শহীদ জিয়া সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সেই শহীদ জিয়া রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সেই শহীদ জিয়া বিএনপি গড়েছেন। আমি যে দল করি, সেটা হলো মুক্তিযোদ্ধার দল।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা শহীদ জিয়ার দল করেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নেত্রী মানেন। দেশনায়ক তারেক রহমানকে নেতা মানেন। আমার দল ও তাঁরা দুজন আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনারা ধানের শীষে ভোট দেবেন। বড় নদী থাকলে মরা গরু ভাইসা যায়। এতে নদীর কি কোনো ক্ষতি হয়? ফজলুর রহমানের বড় নদী, স্রোতের নদী। এই নদীতে মরা গরু ভাইসা যাবে। আমি শুধু আপনাদের বলব, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের ১৩০টা সেন্টারেই ধানের শীষ পাস করবে। কোনো সন্দেহ নাই। আমি দেখব কোন সেন্টারে সবচেয়ে বেশি ভোট পাই। আল্লাহর রহমতে বিএনপি পাস করবে। ইনশা আল্লাহ বিএনপি সরকার গঠন করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নাকি মুসলমান না, ধর্মকে নাকি গালাগাল করি। আমি আপনাদের হাতজোড় করে বলি, আমি এই পৃথিবীতে মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি, সেহেতু আমি মুসলমান। যখন আমার বয়স পাঁচ বছর, তখন আমার বাবা মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন স্কুলে যাওয়ার আগে। অ, আ পড়ার আগে আমি প্রথম পড়েছি আলিফ, বা, তা, ছা। ধর্মের ইস্যুতে যারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে তারা হলো মিথ্যাবাদী, বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী।’
ফজলুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমার বিরোধ ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে জামায়াত বলছে—“আমরা কি শুধু গণতন্ত্রের জন্য হাসিনাকে যুদ্ধ কইরা নামাইছি নির্বাচনের জন্য। আমরা নতুনভাবে রাষ্ট্র করব।”’
আবার বলছে, ‘৪৭ হলো স্বাধীনতা আর ’২৪ হলো স্বাধীনতা। ’৭১ হলো গন্ডগোল, ’৭১ কিছু না। এইডা ইন্ডিয়ার হিন্দুরা গন্ডগোল লাগাইছে। এইডা কোনো মুক্তিযুদ্ধ না।’ দুই দিন, তিন দিন সহ্য করছি। যখন দেখছি আওয়ামী লীগ তো পালাইয়া গেছে। হাসিনা খারাপ তাঁর জেল হবে, মৃত্যুদণ্ড হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ খারাপ হবে কেন? আমার কথাটা কি আপনারা বোঝেন? কিন্তু রাজাকারের বাচ্চারা এইটা শুনতে চায় না, কয় ফজু পাগলা কয় কী?
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ খারাপ হবে কেন? মুক্তিযুদ্ধ তো কোনো দোষ করেনি। হাজার বছর ধরে এই বাংলার মায়েরা নামাজ পড়ে খোদার কাছে প্রার্থনা করেছে আমাদের এমন বীর সন্তান দাও যারা ব্রিটিশদের বিতাড়িত করবে। ১৯৪৭-এর পরে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ ’৭০ সনে নৌকা মার্কায় ভোট দিল।’
‘পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান যখন ক্ষমতা দিল না, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলাম। ৩০ লাখ মানুষ মারা গেল। দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত দিল। আমার সোনার বাংলা পুড়ে ছারখার হলো। এক কোটি মানুষ ইন্ডিয়াতে নির্বাসনে গেল। এরা যদি বলে কোনো যুদ্ধ হয় নাই—সেটা কি আপনারা মানবেন?’
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি শরিয়তে বিশ্বাস করি। আমি তো নামাজ পড়ি, রোজা রাখি। আমি তো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) কলেমা না পড়ে ঘর থেকে বাহির হই না। আমি বিসমিল্লাহ না পড়ে কোনো কিছু মুখে দিই না। আমি ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্ম পালন করি। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে আমি মনে করি, এ দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সব সমান, সমান অধিকার।’
রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এলিম হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন, ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন, সিদ্দিকুর জামান ঠাকুর স্বপন, সিনিয়র সহসভাপতি মনির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ।