কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার নান্দিনা এলাকা থেকে ২২ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছয় রাউন্ড গুলিভর্তি বিদেশি পিস্তল, রামদাসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তাঁরা সবাই সৈয়দ এহসানুল হুদার সমর্থক বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ হোসেন বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্রসহ ২২ জন আটকের ঘটনায় বাজিতপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হৃদয় আহমেদ (২২), মো. দামমান (১৯), মো. তাওশ আহমেদ (২৩), মিজানুর রহমান (৪০), জামান (১৯), মো. সোহেল মিয়া (৪০), হাফিজুল রহমান অন্তর (২৫), মো. রাব্বি মিয়া (২০), সাকিব (১৮), মো. বাছির (৩৭), মো. মঞ্জিল মিয়া (৩১), মো. এজাহার মিয়া (৪২), আজহার উদ্দিন রিয়াজ (২৭), মো. টিটু মিয়া (৩৫), গোলাম সারোয়ার জিহাদ ওরফ ভুবন (২৫), রুহুল আমীন (৪০), গিয়াস (৩২), মো. জুনায়েদ মিয়া (৩৯), মো. রাজু (২৫), মো. মারুফ হাসান (১৮), মো. ইয়াছিন (৩৬) ও মো. জনি মিয়া (৩০)।
এর আগে দলীয় মনোনয়নের দাবিতে বাজিতপুর-নিকলী ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা মানববন্ধন করেন ইকবাল সমর্থক নেতা-কর্মীরা।
অপর দিকে একই দিন বিকেলে বাজিতপুরে লাঠিমিছিল করেন ১২-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটিতে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ এহসানুল হুদা। কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ।
এ সময় বাজিতপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দোকানপাটের সাটার লাগিয়ে দেন। শহরজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৪০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি গাড়ি।
জানা যায়, জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে বিএনপি প্রাথমিক মনোনয়ন দিলেও কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫ এই দুটি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়নি।
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি নেতা শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল ছাড়াও শরিক দলের দুই নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।
যদিও এক বছর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য দলের স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পর থেকে বিএনপির একটি অংশ সৈয়দ এহসানুল হুদার পক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
জানতে চাইলে ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। ডাকবাংলো মোড় থেকে গণমিছিল হবে। দুই জায়গায় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজে উপস্থিত থেকে গুলিবর্ষণ করে। মিছিল থেকে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, ‘আমার জন্য বাজিতপুর নিকলীর নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল শনিবারও মানববন্ধন করেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা হামলা করে বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে আহত করে। তারা বক্তব্যে আমার প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তারা অস্ত্রের যে ঝনঝনানি দেখিয়েছে, তার নিন্দা জানাই।’