কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ইমরান শেখ ইমন (৩২) নামের আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার ইমন ওই এলাকার সামসুল আলমের ছেলে। এর আগে গত ২০ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কাজি সোহান ও খন্দকার আশিকুর রহমান জুয়েল নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব-১২।
পুলিশ সুপার তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিক রুবেলের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই জেলা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। এরপর ৭ জুলাই কুমারখালীর গড়াই নদী থেকে রুবেলের মরদেহ উদ্ধারের পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা দল, সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও র্যাবের একটি বিশেষ টিম মাঠে নামে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সহায়তায় একেবারে নিশ্চিত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপারের দাবি, ইমনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যেগুলো এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকতার বিষয় নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়নি। এর সঙ্গে অন্য একটি বিষয় জড়িত। যেহেতু এই মামলায় আরও অনেকে জড়িত আছে, তাই এখনই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। এতে আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে ইমরান শেখ ইমনকে কড়া পুলিশ পাহারায় কুষ্টিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। পুলিশ সুপার জানান, ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে নিজ পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মোবাইল ফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁর ছোট ভাই মাহাবুব। এ ঘটনার চার দিন পর বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদী থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন শুক্রবার রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সাংবাদিক হাসিবুর রহমান কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানের ছেলে। রুবেল জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিএডিসিতে ঠিকাদারি ব্যবসাও করতেন।