‘আমাদের পরীক্ষা চলছে, সবাই লিখছে আমি বসে আছি। সবাই কী লিখছে বাংলায়, আমি তো বাংলাই লিখি না, ইংলিশে লিখি! অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার হলরুমে ফেসবুকে লাইভ দেব। সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হলো। ম্যাডামও দেখি আমার ভিডিও করছে। আমরা ছাত্রলীগ যেখানে যাব সেখানেই বুলেট!’
এভাবেই ঝিনাইদহে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষাকেন্দ্রের হলরুমে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা বলেন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন।
সুপার উপজেলার প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ছয় মাস মেয়াদি কোর্সের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দেশব্যাপী কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও গ্রাফিকস ডিজাইন বিষয়ে ছয় মাস ও তিন মাস মেয়াদি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখিত এবং ১১টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
মনির হোসেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুপুর ১২টার দিকে লাইভ শুরু করেন, ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে শেষ করেন। ২০২১ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।
পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক লাইভ করা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। লাইভেই নানা মন্তব্য আসতে থাকে। একপর্যায়ে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন মনির হোসেন।
ফেসবুক লাইভে এসে মনির হোসেন বলতে থাকেন, ‘আমার খাতা দেখবেন? আমি লিখেছি ইংরেজিতে, মাস্টার্স করা আমার। স্যারেরা ঘুমাচ্ছে, আমি ইংরেজিতে লিখেছি, সালামও লিখেছে।’ পাশের শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘দেখি তুই কি লিখেছিস।’ তখন ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ‘না লিখে আমরা এ+ পেতে চাই। ওই পাশে একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে।’
‘পরীক্ষার হলে লাইভে আছি তাই কি, আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাস তো পাবই, ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছে’, বলেন মনির।
এ বিষয়ে পরে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন মোবাইলে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি তো পরীক্ষা চলাকালে লাইভ করিনি, পরীক্ষা শেষ হলে ছোট একটা লাইভ করেছিলাম।’
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিম বলেন, ‘পরীক্ষার হলে তো লাইভ করা ঠিক না। তবে সাধারণ সম্পাদক লাইভে এসে কী বলেছে সেটি এখনো আমি জানি না। তবে আমি বিষয়টি শুনলাম, অবশ্যই খতিয়ে দেখে যদি তাঁর এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক লাইভ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহবুব উল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা তো পরীক্ষাই, সেখানে ছাত্রলীগ নেতা হোক আর সাধারণ শিক্ষার্থীই হোক, কারোরই ফেসবুক লাইভ করার সুযোগ নেই। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকক্ষে লাইভের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় পরীক্ষা কক্ষে যেই দায়িত্বরত থাকুক না কেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান দায়িত্ব এড়াতে পারে না। প্রয়োজনবোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারত।’