খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অঙ্গসংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদারকে গুলির মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাঁদের মধ্যে শামীম শিকদার ওরফে ডি কে শামীম ওরফে ঢাকাইয়া শামীম নামের এক যুবক রয়েছেন; যিনি মোতালেবকে গুলি করেছেন এবং একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে র্যাব জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার বসুপাড়া এলাকা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই রাতে মাহদিন নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ নিয়ে গুলির ওই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে র্যাব জানিয়েছেন। তিনি মাদক ও মাদক বিক্রির টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে নিজেই মোতালেব শিকদারকে গুলি করেন।
আজ শনিবার দুপুরে খুলনায় র্যাব-৬-এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৬-এর মুখপাত্র মেজর মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পরপর র্যাব-৬-এর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ভিডিও সংগ্রহ করে। পরে সেসব ভিডিও এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা প্রাথমিকভাবে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করি।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে মো. আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে সোনাডাঙ্গা থানার বসুপাড়া এলাকা থেকে শামীম সরদার ও মাহদিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৬-এর মুখপাত্র আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি নিজেই মোতালেব শিকদারের মাথায় গুলি করেছেন বলে র্যাবকে জানান।
গ্রেপ্তার শামীমের বরাতে নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন গ্রেপ্তার তানিয়া তন্বীর বাসায় মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। ওই দিন সকাল ৭টার দিকে সন্ত্রাসী শামীম শিকদার ও তাঁর চার-পাঁচজন সহযোগী ওই ফ্ল্যাটে যান। এর আগে থেকেই ওই ফ্ল্যাটে মোতালেব শিকদার, তন্বী, তাঁর স্বামী তানভীর, তন্বীর বন্ধু ইমরান, আরিফ, ইফতি ও ইফতির এক চাচাতো ভাই উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শামীম শিকদার ওই ফ্ল্যাটে থাকা তন্বী ও তাঁর সহযোগীদের কাছে থাকা মাদক এবং মাদক বিক্রির টাকার ভাগ চান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে শামীম তাঁর সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে মোতালেবকে গুলি করে পালিয়ে যান।
র্যাব কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, শামীম শিকদার সোনাডাঙ্গা এলাকার একজন অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে দস্যুতা, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মোতালেবকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি মূলত সোনাডাঙ্গা এলাকায় মাদক কারবার ও মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ঘটেছে বলে জানা গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারেও চেষ্টা চলছে।
২২ ডিসেম্বর সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার আল আকসা মসজিদ সরণি রোডের মুক্তা হাউসের নিচতলায় এনসিপির আরেক অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুবশক্তির খুলনা জেলার যুগ্ম সদস্যসচিব তানিয়া তন্বীর ফ্ল্যাটে মোতালেবকে গুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই দিন রাতেই তন্বীকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পরদিন ২৩ মঙ্গলবার দুপুরে মোতালেবের স্ত্রী ফাহিমা আক্তার বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। তন্বী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মামলাটি থানা থেকে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।
খুলনা মহানগর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈয়মুর ইসলাম বলেন, মোতালেব শিকদার হত্যাচেষ্টা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর তদন্ত কার্যক্রম অনেকটাই এগিয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।