ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক জাহিদুজ্জামান হিরকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার সকাল থেকে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কিসমত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। চলে বিকেল পর্যন্ত। পরে বেলা ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর আগে বিক্ষোভ চলাকালে দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কিছু বহিরাগত সমর্থক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয় অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালে তারা পালিয়ে যায়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, গত সোমবার সকালে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নিজ রুমে ডেকে নেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুজ্জামান হিরক। ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন ওই শিক্ষক। বিয়ষটি ঘটনার দিনই ওই শিক্ষার্থী স্কুলের শিক্ষকদের জানালে তাঁরা কোনো গুরুত্ব দেননি। এর জেরে আজ সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে পালিয়ে যান প্রধান শিক্ষক। কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষকের কিছু বহিরাগত সমর্থক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয় (তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি)। হামলার পর অভিভাবকেরা এসে ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালে পালিয়ে যায় বহিরাগতরা।
এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। পরে শৈলকুপার ইউএনও স্নিগ্ধা দাস ও থানার ওসি মাসুম খান ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ স্থগিত করে ফিরে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্রী বলে, ‘আমি ওই দিন দেখেছিলাম আমার বান্ধবীর শরীরে হাত দিচ্ছে এবং ওড়না ধরে টান মারে। ওই দিনই আমরা স্কুলের সহকারী শিক্ষক বন্যা ম্যাডামকে বিষয়টি জানাই।’
এ বিষয়ে স্কুলশিক্ষক বন্যা বলেন, ‘আমাকে মেয়েরা বিষয়টি বলেছিল। আমি ওদের পরামর্শ দিয়েছিলাম অভিভাবকদের ডেকে এনে লিখিত অভিযোগ দিতে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে কিসমত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুজ্জামান হিরকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ইউএনও স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের আশ্বাসে তারা ঘরে ফিরে গেছে। আর যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করছি। ভুক্তভোগী যে আছে, তাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। একই সঙ্গে যারা আহত হয়েছে, তাদেরও থানায় অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষক দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খানকে ফোন দিলে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে লাইন কেটে দেন।