কানাডার ভিসা ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক চক্র যশোরের দুই যুবকের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঝিকরগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের আবু সায়েমের ছেলে আলসাবা রাতুল এবং একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে শাকিল।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ঝিকরগাছা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের নাসির উদ্দিন আলতাফ ও তাঁর স্ত্রী শাহানাজ বেগম।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিদেশে পাঠানোর নাম করে আলতাফ ও তাঁর স্ত্রী দুজন মিলে ঢাকায় ভুয়া নামে ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করেন। তাঁদের খপ্পরে পড়ে সহায়সম্পদ বিক্রি ও বন্ধক রেখে ৪০ টাকা খুইয়েছেন তাঁরা। তাঁদের পরিবার এখন নিঃস্ব।
আজ বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগী যুবক আলসাবা রাতুল আজকের পত্রিকাকে জানান, নাসির উদ্দিন আলতাফ ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাঁকে নেপালে নিয়ে যান। আর সেখানে ভুয়া কানাডার দূতাবাসের অফিস বানিয়ে তাঁর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পরে তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে আবারও নেপালে গেলে একটি হোটেলে দুই মাস তাঁকে আটকে রাখা হয়। তাঁদের চুক্তি ছিল ১৯ লাখ টাকা করে নেবে। হোটেলে আটকে রেখে বাড়িতে ফোন দিয়ে চুক্তি বাদে আরও এক লাখ করে টাকা নেন নাসির উদ্দিন আলতাফ। এরপরে কানাডার ভিসা লাগানো পাসপোর্ট হাতে দিয়ে ওই দিন নাসির উদ্দিন আলতাফ কুয়েতে পালিয়ে যান। আলসাবা রাতুল বলেন, ‘পরে বুঝতে পারি, এটা কোনো কানাডার অ্যাম্বাসি ছিল না। তারা একটি অ্যাম্বাসি অফিস বানিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে কাগজপত্র জমা নেন এবং ইন্টারভিউ নেন। যাতে আমরা সন্দেহ না করি। আমাদের যখন পাসপোর্ট হাতে দেয়, তখন দেখি—পাসপোর্ট খোলা। পরে দেশে এসে পাসপোর্ট অনলাইনে যাচাই-বাছাই করে দেখি, এটা কানাডার ভুয়া ভিসা।’
ভুক্তভোগী আরেক যুবক শাকিল হোসেনের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নাসির উদ্দিন আলতাফ আমার ফুফাতো ভাই। তারা স্বামী-স্ত্রী বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করে। আলতাফ এক দিন এসে বলল, ‘‘ভাই, আমার তো ছেলে নেই। আপনার ছেলে মানেই আমার ছেলে। ছেলের জন্য একটা ভালো চাকরি আছে কানাডায়। ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়ে দিন। নাসির উদ্দিন আলতাফের কথায় বিশ্বাস করে আমার দোকানপাট, জমি-জায়গা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সব বিক্রি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাতবারে আমি ১৯ লাখ টাকা দিয়েছি। আজ আমার আপনজন আমাকে বড় ক্ষতি করল। পথে বসাল। আমি এর বিচার চাই।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে নাসির উদ্দিন আলতাফ আজকের পত্রিকার কাছে বলেন, তিনি মাধ্যম হিসেবে যোগাযোগ করে দিয়েছেন। ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে বসাবসিও হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁরা নানান জায়গায় নানান কথা বলছেন।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, ‘কানাডায় পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দেওয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’