ফরিদপুর সদর উপজেলার নিবির মণ্ডলের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। এ বয়সে খেলাধুলা, মা-বাবার আদরে বড় হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু গত রোববার তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। শিশুটির স্বজনদের দাবি, মা-বাবার বিরোধের জেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে নিবির।
মৃত নিবির উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মোস্তফাডাঙ্গি গ্রামের মুরাদ মণ্ডলের (৪০) ছেলে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত রোববার বসতঘরের আড়া থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।
শিশুটির চাচা আজম মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে জানান, আট বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমান তার বাবা মুরাদ মণ্ডল। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে মালদ্বীপ থেকে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে দেখেন, তার টাকাপয়সা কিছুই নেই। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ বাধে মুরাদের। পরে নিবিরসহ তিন সন্তানকে নিয়ে পাশের আদমপুর এলাকায় বাপের বাড়ি চলে যান তাঁর স্ত্রী।
আজম মণ্ডল জানান, দুই মাস আগে নিবির আবার তার বাবার কাছে চলে আসে। এরপর থেকে সে বাড়িতে বাবার সঙ্গেই থাকত। গত রোববার দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে এসে নিবির দেখে, ঘরে খাবার নেই, ওর বাবাও মাঠে ছিল। পরে আরেক চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নানাবাড়িতে যায়। সেই ভাতিজার বরাতে আজম মণ্ডল জানান, শিশুটি তার নানাবাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে খাবার চেয়েছিল। সেখানে তার মা তাকে বকাবকি করে। পরে বিকেলে ঘরে ফিরে নিবিরের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তার বাবা। ছেলের মৃত্যুতে অচেতন হয়ে পড়া বাবা মুরাদ মণ্ডলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান আজম মণ্ডল।
শিশুটির পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, কোতোয়ালি থানা-পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার দুপুরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। বিকেলে দাফনের জন্য বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছনেরটেক গোরস্তানে কবর খুঁড়তে যান প্রতিবেশীরা। এ কবরস্থানেই মোস্তফাডাঙ্গির মৃত বাসিন্দাদের দাফন করা হয়ে থাকে। তবে সেখানে গেলে কবর খুঁড়তে বাধা দেন ওই ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
প্রতিবেশী বাবুল মণ্ডল বলেন, ‘আমরা যখন খুঁড়তে যাই, তখন রফিক এসে বলে, এই কবরস্থানে গলায় দড়ি দেওয়া কোনো লাশ দাফন করা যাবে না, যার যার বাড়িতে গিয়ে কবর দাও। এসব বলে আমাদের অপমান করে পাঠায় দেয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কবরস্থানে আজ পর্যন্ত কোনো গলায় দড়ি দেওয়া লাশ কবর দেওয়া হয়নি। এজন্য তাঁদের আমি বলছিলাম, কবরস্থানের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি, কবর দিতে নিষেধ করি নাই। কিন্তু উনারা রাগ করে চলে গিয়ে অন্য জায়গা কবর দিছে।’
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘শিশুটির মা-বাবার বিভাজনের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। মা-বাবা একসঙ্গে থাকলে এমনটি নাও হতে পারত। তবে লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে কেউ জানায়নি।’