জুলাই আন্দোলনের চেতনার নামে চারদিকে বন্দোবস্ত ও লুটপাটের অভিযোগ তুলে গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন এক জুলাই যোদ্ধা। তাঁর নাম আবরাব নাদিম ইতু (২৭)। তিনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাম প্রত্যাহারের এ আবেদন করেন আবরার নাদিম ইতু। এ সময় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহরাব হোসেন আবেদনপত্রটি গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসকের বরাবর দেওয়া ওই আবেদনপত্রে জুলাই যোদ্ধা আবরাব নাদিম ইতু উল্লেখ করেন, ‘জুলাইয়ের যৌক্তিক আন্দোলনে আহত হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং স্থানীয় সরকারগুলো জুলাইয়ের যে চেতনা দুর্নীতি ও লুটপাট মুক্ত দেশ গড়তে চেয়েছিল, তা কোনোভাবেই এক বছরের অধিক সময় ধরে পারেনি এবং কার্যকর যে পদক্ষেপ, তা-ও নিতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন অসংগতিমূলক কর্মকাণ্ড লক্ষণীয় রয়েছে।’
আবেদনপত্রে এই জুলাই যোদ্ধা আরও উল্লেখ করেন, ‘ফরিদপুরে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও বিভিন্ন সেক্টরে পূর্বের ন্যায়ই বহাল রয়েছে অনিয়ম। একটি সিন্ডিকেটও ভাঙেনি, অনিয়মও থেমে নেই; যা আপনারা সবাই অবগত আছেন। তাই আমি আমার নাম সরকারি গেজেট থেকে প্রত্যাহার এবং মাসিক ভাতা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করলাম। যদিও আমি তা নিইনি।’
আবরাব নাদিম ইতু জানান, তিনি জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে সক্রিয় ছিলেন। প্রথম দিকে তাঁর নেতৃত্বে ফরিদপুরে পদযাত্রা, মিছিল শুরু হয়। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শহরের ব্রহ্মসমাজ সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। ওই সময় আবরাব নাদিম, কাজী নিশাদ নামে আরেক শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হন। এ ছাড়া ফরিদপুরের বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
ইতু বলেন, ‘আমরা যে জন্য আন্দোলন করেছিলাম, তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পারছি না। চারদিকে নিজেদের বন্দোবস্ত চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমার বাবার দুই বছর পেনশনের টাকা আটকে রেখেছিল। এই অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হলো না। এটা জাস্ট বললাম, আমার ব্যক্তিগত কথা। কিন্তু দেশের অধিকাংশ সেক্টরের একই অবস্থায় রয়েছে। কোনো অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তাই এসব সরকারি গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহার করলাম এবং মাসিক ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করলাম।’
আবেদনপত্রটি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বেচ্ছায় জুলাইয়ের সরকারি গেজেট থেকে এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদনটি আমরা হাতে পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।’