শিবচর (মাদারীপুর): ঘুম ভাঙলে নিজেকে পদ্মায় ভাসতে দেখে শিশু মীম। সঙ্গে নিজেদের বড়সড় একটি ট্রাভেল ব্যাগ। ব্যাগটি বুকের ওপর ঠেকিয়ে পানিতে ঠিক কতক্ষণ ভেসেছিল তা খেয়াল নেই তার। সব কিছু মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মতো। পানি থেকে এক ব্যক্তি তাকে ব্যাগটিসহ নদীর পাড়ে টেনে তোলে। এরপর হাসপাতালে।
শিবচরের পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে ভর্তি শিশু মীমকে জিজ্ঞাসা করলে এভাবেই কথা বলে সে। আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মীমকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিবচর ইউএনওর কার্যালয়ের এক কর্মচারি ও বাংলাবাজার স্পিডবোট ঘাটের নৈশপ্রহরী দেলোয়ার ফকিরের তত্ত্বাবধানে শিশুটি হাসপাতালের একটি কক্ষে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।
ভোরের কোনো ঘটনা মনে পড়ছে কিনা জানতে চাইলে ভাত খেতে খেতেই মীম বলে, গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা গ্রামে। পাঁচ মাস আগে বাবা-মার সাথে ঢাকায় যায়। মিরপুরে ভাড়া বাসায় থাকছিল। দাদা মারা যাওয়ার খবর শুনে ছোট দুইবোন, বাবা ও মাসহ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। ভোরে স্পিডবোটে ওঠে তারা। বোটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। হঠাৎ পানিতে ব্যাগ ধরা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে। এক লোক তাকে উদ্ধার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু মীমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মীমকে উদ্ধারকারী নৌ পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি। হাত ও চোখের কাছে আঘাতের চিহ্ন ছিল সামান্য। দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিবারের সব সদস্য মারা গেছে।
মীম শুধু জানে তার মা, বাবা, বোনেরা কেউ বেঁচে নেই। মাঝে মাঝেই মা মা বলে কেঁদে উঠছে। কান্নারত অবস্থায় মীম বলে, আমরা দাদুবাড়ি যাচ্ছিলাম। দাদা মারা গেছে। তাকে দেখতে। আমার আর কেউ নাই।
উল্লেখ্য, আজ সোমবার ভোর ৬টা দিকে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে এসে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায়। এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত পাঁচজন চিকিৎসাধীন।