ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৬) মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা।
ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ধামরাইয়ের পাটানটুলায় চলে গেছেন।
মর্গ সূত্র জানায়, মরদেহ থেকে ভিসেরা সহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
মর্গে মৃত ছাত্রীর চাচা গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, কানাডা প্রবাসী ইফতেখারের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ইলমার। এরপর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। দেড় মাস পর পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস পর স্বামী আবার কানাডা চলে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় ইলমাকে সন্দেহ।
তিনি বলেন, ইলমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করে এই সন্দেহে তার ওপর শুরু করে মানসিক নির্যাতন। তাকে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে দিত না। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও না। বিদেশ থেকেই তাকে হুমকি দিত দেশে আসার পর তাকে শিক্ষা দেবে।
তিনি বলেন, ইলমার স্বামী কবে দেশে আসছে তাও জানি না। শুনেছি ৬ দিন আগে সে দেশে এসেছে। গতকাল স্বামী ইফতেখার ইলমার মাকে ফোন দিয়ে জানায়, ইলমা রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। তাকে দরজা ভেঙে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে স্বজনরা সবাই ওই হাসপাতালে গিয়ে ইলমাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
ইলমা কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্বামী তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তাদের। এর আগেও বিয়ে করেছিল ইফতেখার। সেই সংসারে তার একটি সন্তানও রয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইলমার স্বামীর কঠোর বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
এদিকে ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র রিফাত মাহমুদ বলেন, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী তাকে সহপাঠী বা শিক্ষকদের কারও সঙ্গে কথা বলতে বা যোগাযোগ করতে দিত না। তখন থেকেই আমরা বুঝতে পারতাম সে খুব কষ্টে আছে। আপু খুব সংস্কৃতিমনা ছিল। এ ছাড়া খুব খোলা মনের ছিল। তার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ হলে ড্যান্স একাডেমির শিক্ষকতা করবেন।
মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলসানারা বানু উল্লেখ করেন, মৃতদেহের ওপরের ঠোঁটে কালচে জখম, নাকে আঘাতের চিহ্ন ও কালচে শিরা জখম বিদ্যমান। এ ছাড়া ঘাড়ে লম্বলম্বি কালচে জখম, গলার উপরি ভাগে থুতনিতে কালচে জখম, পিঠের ডান পাশে কালচে জখম রক্ত জমাট, বাম পায়ের বুড়ো আঙুলে ছিলা জখম। দুই পায়ের হাঁটুর নিচে কালচে জখমের চিহ্ন আছে। ডান ও বাম হাতের আঙুলে কাটা ছেঁড়া জখম আছে।
এ ছাড়া ওই বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা একটি ওড়নাও আলামত হিসেবে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহালে।
এর আগে, গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ইলমার মৃতদেহটি উদ্ধার করে বনানী থানা-পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।