ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের হাতিরঝিল থানা হেফাজতে মারা যাওয়া রুম্মন শেখের স্বজনেরা মরদেহ বুঝে নিতে আসছেন না। এমনকি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
আজ রোববার সন্ধ্যায় শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে এ তথ্য জানান ডিসি আজিমুল হক।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মরদেহের ময়নাতদন্তের পর নিহতের আত্মীয়, স্ত্রী ও স্বজনদের খোঁজ করেছি। তাঁদের ফোন করা হয়েছে। স্বজনেরা বলেছে, অন্য কাজে ব্যস্ত। লাশ নেব না। তাঁরা বিভিন্ন রকমের কথা বলেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর থেকে লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু নিহতের স্বজনেরা মরদেহ নিচ্ছে না। আমাদের পুলিশের সদস্যরা অপেক্ষা করছে লাশ হস্তান্তরের জন্য। কিন্তু স্বজনেরা আসছে না।’
মরদেহ বুঝে না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি আজিমুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে এর ব্যাখ্যা দিতে পারছি না। তবে স্বজনদের লাশ বুঝে না নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কারণ লাশ ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের নিতে হবে। লাশ এখন হিমাগারে আছে। কেন যে লাশ নিচ্ছে না সেই ব্যাখ্যা তাদের কাছ থেকে জানতে হবে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
থানায় হেফাজতে রুম্মনের আত্মহত্যার সংবাদটি স্বজনদের না জানিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছিল। পরে তাঁরা আদালতে গিয়েও বিষয়টি জানতে পারেননি। থানা থেকে সঠিক তথ্য না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ নিহতের স্বজনদের দেখানো হয়েছে। তখন তাঁদের সঙ্গে অনেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। নিহতের স্বজনদের এমন দাবি ভিত্তিহীন। কীভাবে আত্মহত্যা করেছে সেটিও ফুটেজে আছে। নিহতের স্ত্রী, ভাই, বোন সবাইকে ফুটেজ দেখিয়েছি। এখন এই ঘটনায় পরিবারের পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে, এমনটাই আশঙ্কা করছি। মরদেহ বুঝে না নেওয়ার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মরদেহ বুঝে না নেওয়ার ব্যাখ্যা বোধগম্য নয়।’
লাশ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বজনদের শর্ত দিয়েছে, এমন অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। এটা সঠিক নয়। এমন শর্ত দেওয়া আইনগত ও যুক্তিসংগত নয়।’
পিওরইট ওয়াটার ফিল্টার কোম্পানির অর্থ চুরির মামলায় রুম্মনকে আসামি করা হয়েছিল। সেই মামলায় তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে ডিসি বলেন, ‘৫৩ লাখ টাকা চুরি হয়েছে। নিহতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা। আসামিদের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। এটা তদন্তের বিষয়।’
থানা সূত্রে জানা যায়, রুম্মন পিওরইটের ডেলিভারি ম্যান ছিলেন। গত ১৩ আগস্ট সুমনের বিরুদ্ধে ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও প্রমাণ লোপাট করতে একই প্রতিষ্ঠানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটির তদন্ত করছেন হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আদনান বীন আজাদ। গত ১৯ আগস্ট তিনিই সুমনকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন।