রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় এক ওয়ার্কশপের সামনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে বিস্ফোরণে সেখানে পাশে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও পিকআপ ভ্যানও পুড়ে যায়। মোটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি এসে গাড়িতে আগুন দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটকের বাম পাশে এ ঘটনা ঘটে।
আজ রোববার (৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটক ঘেঁষে কয়েকটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। সামনে খালি জায়গা এবং গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়ক। খালি জায়গায় বিভিন্ন মালিক পিকআপ ভ্যান রাখেন এবং নষ্ট গাড়ি রেখে মেরামত করেন মেকানিকরা। গতকাল রাতের আগুনে পোড়া গাড়িগুলোর কাঠামো সেখানেই দেখা যায়।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ওয়ার্কশপের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন লোকমান হাকিম। লোকমান জানান, গতকাল রাত দেড়টার দিকে তিনি ও জুয়েল নামের একজন গাড়িচালক দক্ষিণ পাশে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় বেড়িবাঁধের পাশে থাকা একটি মাইক্রোবাসে আগুন ধরে। তাঁরা দুজন দৌড়ে গিয়ে দেখেন, ক্যাপ ও মাস্ক পরা এক ব্যক্তি দৌড়ে মোটরসাইকেলে ওঠার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি উঠতে পারেননি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে যিনি অপেক্ষা করেছিলেন, তিনি মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার দিকে দ্রুত চলে যান। আর মাস্ক পরা ব্যক্তি দৌড়ে গাবতলীর দিকে যান।
লোকমান আরও জানান, তখন তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এর মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ছাদ ও যন্ত্রাংশ উড়ে যায়। এ পর্যায়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাঁরা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন বলেও জানান লোকমান। এরপর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। ততক্ষণে তিনটি গাড়ি পুড়ে যায়।
পোড়া অ্যাম্বুলেন্সের পাশে কাঁদতে দেখা যায় এর মালিক মো. সাগরকে। তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে গাড়িটি মেরামতের জন্য সেবা অটোমোবাইল নামের একটি গ্যারেজে দিই। তারা গাড়িটি বেড়িবাঁধের পাশে রেখে মেরামতের কাজ করেছে। আমি তখন তাদের নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তারা শোনেনি। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় এই অ্যাম্বুলেন্স কিনেছি। মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।’
সেবা অটোমোবাইল গ্যারেজের মালিক মো. জসীম জানান, সব সময় গাড়ি গ্যারেজের সামনে রেখে মেরামত করেন। কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। গতকাল কারা, কেন টার্গেট করে এই আগুন দিয়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না। ঘটনার পর থানা-পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ বলেছেন, ‘ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, একটি মোটরসাইকেলে দুজন ছিল। এই মোটরসাইকেল থেকে কিছু একটা ছুড়ে মারার পরপরই বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন ধরে যায়। ছুড়ে মারা বস্তুটি পেট্রলবোমা বলে ধারণা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের।’
ওসি আরও বলেন, ‘আমরা একটা ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। সেখানে একজনকে দৌড়ে চলে যেতে দেখা গেছে। মাথায় সাদা ক্যাপ। আমরা আশপাশের আরও কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করছি।’ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তাঁকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।