সাগরতীরের জেলা কক্সবাজারে ভোটের আমেজ ফিরে এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর জমে উঠেছে প্রচার। চারটি সংসদীয় আসনের তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিএনপির ঘোষণার পর কক্সবাজার-৪ আসনের প্রার্থী বদল চেয়ে বিক্ষোভ করেছে দলের একাংশ। অন্য দুটি আসনে বিরোধ নেই। তবে সব আসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া জামায়াত।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। জয়ী হয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও। এবারের নির্বাচনে দলটির প্রার্থী নেই। আর এই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক অন্য রাজনৈতিক দলগুলো।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জামায়াতে ইসলামী, কক্সবাজার-২ ও ৩ আসনে আওয়ামী লীগ এবং কক্সবাজার-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন ছাড়া বাকি তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেন। এরপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি আসনেই বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন।
এ ছাড়া ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি আসনের মধ্যে দুটিতে বিএনপি, একটিতে জামায়াতে ইসলামী ও একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন।
কক্সবাজার-১
জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হওয়ার সুবাদে তিনি এলাকায় বেশ উন্নয়ন করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন। মামলাজনিত কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাহউদ্দিন অংশ নিতে না পারলেও তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
বরাবরই সালাহউদ্দিন আহমদকে এ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে বিএনপি। চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে জানান, কক্সবাজারের উন্নয়নে সালাহউদ্দিন আহমদ পরীক্ষিত নেতা। মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি এবারও বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
অভিজ্ঞ ও প্রবীণ সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন জামায়াতে ইসলামীর তরুণ নেতা কক্সবাজার শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক। তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চকরিয়া-পেকুয়ায় মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছে জামায়াতে ইসলামী। তা অবশ্যই নির্বাচনের রায়ে দেখা যাবে।
কক্সবাজার-২
জেলার দুই দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসন। এই আসন ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। এবারও তিনি জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত প্রার্থী। এ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। তবে এ পর্যন্ত এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এ আসনে সালাহউদ্দিন আহমদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার রয়েছে।
জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ আসন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্র এটি। ফলে দল থেকে এ আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে, তা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। তিনি বলেন, এ আসন বরাবরই বিএনপির দুর্গ। এখানকার মানুষ বিএনপিকে ভোট দেয়। ফলে তাঁকে মূল্যায়ন করবে বলে মনে করেন তিনি।
এ দিকে আসনটিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও কক্সবাজারের সমন্বয়ক এস এম সুজা উদ্দিন।
কক্সবাজার-৩
কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও—এই তিন এলাকা নিয়ে কক্সবাজার-৩ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালেও বিএনপির দখলে ছিল আসনটি।
এবারও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম বেশ মজবুত। জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বাহাদুর।
কক্সবাজার-৪
মিয়ানমার সীমান্ত এবং সাগর উপকূলের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসন। এ আসনে ইতিপূর্বে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সে দলই ক্ষমতায় গেছে। এখানে বিএনপির হয়ে ১৯৭৯ সাল থেকে নির্বাচন করে আসছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। এবারও তিনি বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে তাঁর মনোনয়ন বদলের জন্য মাঠে সোচ্চার আছেন জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর অনুসারীরা।
এবার এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন দলটির জেলা আমির নূর আহমদ আনোয়ারী। তিনি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এবার এ আসন কবজায় নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন প্রার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। আশা করি, অতীতের মতো ভোটাররা বিএনপিকে বেছে নেবে।
জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম বলেন, চারটি আসনে ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও আস্থা বেড়েছে। ভোটাররা বেশ সাড়া দিচ্ছেন।