রাতভর ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে ডুবেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর। শহরের অনেক বাসাবাড়ি, সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শহরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান ও শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জে ১৭৫ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১৮০, নাচোলে ১৭৫ এবং ভোলাহাটে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় রোপা আমন ২ হাজার ও ২৩৫ হেক্টর আর রবিশস্য ২ হাজার ১৪০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে শহরের ক্লাব সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, পুরাতন বাজার, নিমতলা, বালুবাগান, আরামবাগ, শান্তিমোড়, স্বরূপনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। স্বরূপনগর ও রেহাইচর এলাকার বহু বাড়িতে পানি ঢুকে আসবাব নষ্ট হয়েছে।
ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই শহর প্লাবিত হয়। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
পৌর এলাকার বাসিন্দা কলি খাতুন বলেন, ‘বাসার ভেতরে পানি ঢুকে আছে। ঘরের জিনিসপত্র ও চুলা ভিজে গেছে। তাই কোনো রান্নাবান্না করতে পারিনি। বাচ্চাকাচ্চা না খেয়ে আছে। আমরা রাত থেকেই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছি।’
গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমার ধান পানিতে ডুবে আছে। ধান পড়ে গেছে। এ ছাড়া শাকসবজিও ডুবে গেছে। বড় ক্ষতির মুখে পড়লাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, চর এলাকার সরিষা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ক্ষেত্রে মাছ ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ধানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি নতুন ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে হঠাৎ বৃষ্টিতেও আর এমন জলাবদ্ধতা হবে না।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইয়াছিন আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে শিষফোটা রোপা আমন, সরিষা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও শীতকালীন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, দু-এক দিনের মধ্যে যদি পানি নেমে যায়, তাহলে ফসলের ক্ষতি সীমিত থাকবে। তবে পানি বেশি দিন স্থায়ী হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।