বরিশালের বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কাওছারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থী ১২১ জন কর্মচারী। চাকরি স্থায়ী না করায় সোমবার বিকেলে নগরভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
এদিকে কর্মচারীদের আন্দোলন পরিস্থিতিতে প্রশাসক রায়হান কাওছারের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে।
বিক্ষোভের পর নগর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সস্পাদক আতিকুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, বিসিসি প্রশাসক গত এক বছরে নগরবাসীর সঙ্গে রূঢ় আচরণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
আতিকুর রহমান আরও বলেন, ‘চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ১২১ জনের পদ স্থায়ীকরণে বাধা নেই। কিন্তু প্রশাসক রায়হান কাওছার আশ্বাসের নামে আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রশাসক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করেছেন। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ এরপরও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিসিসিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, প্রশাসক বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি দিয়েছেন। ঠিকাদারি কাজ, জমি ক্রয়ে টাকা না নিয়ে প্রশাসক কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। এমনকি সোমবার তাঁর বাংলোয় স্থায়ীকরণের বিষয়ে দেখা করতে গেলে প্রশাসক গুলি করার হুমকি দিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন মনির বলেন, আপনারা শুনেছেন যে নগরে এত সমস্যা থাকার পরও কুয়াকাটায় রিসোর্টের নামে কোটি কোটি টাকায় জমি ক্রয় করেছেন প্রশাসক।
কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সস্পাদক আনিচুর রহমান বলেন, ‘দাবি নিয়ে বাংলোয় গেলে তিনি (প্রশাসক) আমাদের শুট করার হুমকি দেন। তিনি কুয়াকাটায় জমি ক্রয়ের নামে প্রতি শতাংশে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন। ঠিকাদারি কাজে, নিয়োগে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নিয়েছেন প্রশাসক।’
একাধিক সূত্র বলছে, বিদায়ী প্রশাসক রায়হান কাওছার ছাঁটাই করা ১৫৯ অস্থায়ী শ্রমিককে
কোনো আর্থিক সহায়তা দেননি। তাঁর বদলির খবরে নগর ভবনে এসে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে তাঁরা নগর ভবনের দোতলায় গিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বক্করকে অবরুদ্ধ করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের সব ফাইল আবু বক্কর আটকে রেখেছেন।’
ফাইল আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বক্কর বলেন, তাঁর দপ্তরে ফাইল প্রস্তুত রেখেছেন। প্রশাসক তলব না করায় সেগুলো তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়নি। তিনি বলেন, অনিবার্য কারণবশত প্রশাসককে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে।
এসব ব্যাপারে বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কাওছার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা চাকরি স্থায়ী করার দাবি তুলেছেন তাঁদের আমি বলেছিলাম বিধিবিধান নিয়ে আসতে।’ গুলি করার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ডিআইজি হলে হুমকি দিতে পারতাম। ১৫৯ জনকে ছাঁটাই নয় বরং বয়সজনিত কারণে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’
কুয়াকাটায় রিসোর্টে দুর্নীতির বিষয়ে প্রশাসক বলেন, মৌজা অনুযায়ী যে রেট, তার চেয়ে কম দামে জমি কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাছাড়া আমি তো বেতন বকেয়া রেখে জমি কিনিনি। বরং ৭৫ ভাগ বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ নভেম্বর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কাওছার যোগদান করেন। ১৪ নভেম্বর তাঁকে বদলি করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি বরিশাল ত্যাগ করবেন।