বরগুনার তালতলীর ফাতরার বনের নিশানবাড়িয়ায় বনদস্যুরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারাই দস্যুদের কাছে গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে বন বিভাগ এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বন বিভাগের নিশানবাড়িয়া বিট কর্মকর্তা হায়দার আলীর কার্যালয়ের আধা কিলোমিটার দূরে বনের গাছ কেটে নিয়েছে দস্যুরা। অথচ ওই কর্মকর্তা দস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শত বছর আগে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে ম্যানগ্রোভ ফাতরার বন। ৪ হাজার ৪৮ দশমিক ৫৮ হেক্টর জমিতে গড়ে ওঠা এই বনে রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গরান, গেওয়া, রেইনট্রি, করমচা, বাবলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ফাতরার বনকে নিশানবাড়িয়া ও সকিনা নামের দুটি বিটে বিভক্ত করেছে বন বিভাগ। ওই বনের নিশানবাড়িয়া বিটে অন্তত ২ হাজার একর বিস্তৃত জমি রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, গহিন বনে স্থানীয়দের যোগাযোগ কম থাকায় দস্যুরা অবাধে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিট কর্মকর্তা হায়দার আলীর যোগসাজশে দস্যু দেলোয়ার হোসেন, রাসেল, বেল্লাল, মিলন, সোহাগসহ একটি বাহিনী ওই বনের গাছ কেটে নিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার নিশানবাড়িয়া বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের আধা কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সওদাগরপাড়া আবাসনের পশ্চিম পাশে সরেজমিনে দেখা যায়, নিশানবাড়িয়া খালপাড়ের একটু ভেতরে কেওড়া ও সুন্দরীগাছ কেটে নিয়েছে বনদস্যুরা। ওই গাছের ডালপালা আবাসনের একটি ঘরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। খালপাড়ে দুটি বড় কেওড়াগাছ কেটে রাখা হয়েছে। আরেকটি কেওড়াগাছ কেটে নিয়ে গেছে। গাছের গোড়া (মূল) পড়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিশানবাড়িয়া এলাকায় বসবাসরত কয়েকজন বলেন, বনদস্যুরা বিভিন্নভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগের লোকজন দেখেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দ্রত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
স্থানীয় সাখাওয়াত বলেন, ‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তবে রক্ষা করবে কে? বন বিভাগের লোকজনই তো বনদস্যু লালনপালন করেন। বেশ কয়েক দিন ধরে দস্যুরা বনের গাছ কাটছে; কিন্তু বন বিভাগের লোকজন এসে দেখে যায়; ব্যবস্থা নেয় না।’
বনদস্যু দেলোয়ার হোসেন কেওড়াগাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেউ কি বনের গাছ কাটতে পারে?’ তিনি (বন কর্মকর্তা) অনুমতি দিয়েছেন; তাই দুটি গাছ কেটেছি।’
ওই গাছেরই ডালপালা ঘরে লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন দেলোয়ার।
ফাতরার বনের নিশানবাড়িয়া বিট কর্মকর্তা হায়দার আলী বনের গাছ বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘কয়েকটি গাছ বনদস্যুরা কেটেছে। ওই গাছ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বনদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘বনের গাছ কেটে নেওয়ার খবর জেনেছি। যারা গাছ কেটেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিট কর্মকর্তাকে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেবক মণ্ডল বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। বন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করে চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণে আছি। বিষয়টি ডিএফওকে অবহিত করা হবে।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক তাছলিমা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।