চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির একটি মামলায় এমন এক যুবককে আসামি করা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় কারাগারে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলবলসহ একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলা হয়েছে। একই মামলায় দুই জুলাই যোদ্ধাকেও আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করছেন।
৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের দপ্তরে ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের একটি লিখিত অভিযোগে এ তথ্য জানা গেছে। মো. শাহীন নামের একজন গেজেটেড জুলাই যোদ্ধা এই অভিযোগ করেছেন। শাহীন পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন। গত বছরের ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মো. হাসান নামের এক ব্যক্তি নিজেকে এক্সকাভেটর অপারেটর পরিচয় দিয়ে বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি দিয়ে নগরের খুলশী থানায় চাঁদাবাজির মামলাটি করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে গত ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাত ১টায় নগরের পলিটেকনিক্যাল এলাকা থেকে একটি এক্সকাভেটর জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।
জানা গেছে, মামলায় ইসমাইল হোসেন ওরফে মাইকেল বাবু (৩০) নামের এক যুবককে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যিনি মামলায় উল্লিখিত তারিখে চাঁদাবাজির ঘটনার প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দী ছিলেন। মামলায় উল্লিখিত তারিখের এক সপ্তাহ পরও তিনি কারাগারে ছিলেন।
নগরের বায়েজিদে রুবি গেট এলাকার বাসিন্দা মাইকেল বাবু এলাকায় ছাত্রদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পুলিশের জিআরও শাখার তথ্যে, গত ৩ নভেম্বর ইসমাইল হোসেন ওরফে মাইকেল বাবু বায়েজিদ থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন, ২৫ নভেম্বর আদালত ওই আসামিকে জামিন দেন। পরদিন ২৬ নভেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
চাঁদাবাজির একই মামলায় নগর পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জুলাই যোদ্ধা মো. শাহীন এবং তাঁর ভাই ফাহিমকেও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের কাছে দেওয়া অভিযোগে মো. শাহীন তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া চাঁদাবাজির ভুয়া মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নেওয়ার আবেদন করেছেন।
শাহীন অভিযোগে উল্লেখ করেন, মামলার বাদী হাসান সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও পাহাড়খেকো হিসেবে পরিচিত। জঙ্গল ছলিমপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. ইয়াছিনের অনুসারী তিনি। এক্সকাভেটর দিয়ে রাতের আধারে পাহাড় কাটাই তাঁর কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধীর করা সাজানো মামলাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
মো. শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি অপরাধী চক্র আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমাকে ও আমার পরিবারকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি বানিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে।’
শাহীন বলেন, ‘জঙ্গল ছলিমপুরে ইয়াছিন বাহিনীর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। সে এখন ছলিমপুরসংলগ্ন বায়েজিদের পাহাড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ওই চক্রের সঙ্গে প্রতিহিংসায় লিপ্ত কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী রয়েছে। সেই চক্রটি আমাদের ছাত্রদল ও যুবদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির মাধ্যমে এলাকাছাড়ার চেষ্টা করছে।’
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগে আমরা মামলাটি নিয়েছিলাম। তখন তো এত কিছু যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত চলছে, কে কারাগারে ছিল বা কার সম্পৃক্ততা ছিল না, সেটা তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসবে। তখন মামলায় কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে তাকে আসামি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
মামলার বাদী মো. হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক আসামি কারাগারে ছিল, সেটা তো ঘটনার অনেক পরে। আসলে তারা দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। শেষ পর্যন্ত আমার একটি এক্সকাভেটর জোরপূর্বক নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।’