হোম > সারা দেশ > বাগেরহাট

বনজীবী-রক্ষীরা চিকিৎসাবঞ্চিত

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 

ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।

সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’

সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ

করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী: পানিনিষ্কাশন সংকট, চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

পর্যটকের বাড়তি চাপে ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় আটক ৭

খুলনায় মা হত্যায় ছেলে গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

নারীকে গলা কেটে হত্যা, সাবেক স্বামী আটক