হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্রের খোঁজ মেলেনি আজও

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম

ওমর ওরফে বেলাল হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তেরো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলামে ভর্তি হয়েছিলেন বরগুনার ওমর ওরফে বেলাল হোসাইন। পরিবারের স্বপ্ন ছিল, বেলাল একদিন আলেম হয়ে সমাজে আলো ছড়াবেন। কিন্তু সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কারণ, প্রায় এক বছর ধরে বেলাল মাদ্রাসা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। তিনি কোথায় আছেন, জীবিত না মৃত, তা তাঁর পরিবার বা মাদ্রাসার শিক্ষক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেলাল বরগুনার বামনা উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। ২০১৮ সাল থেকে মাদ্রাসাটিতে পড়তে থাকা এই শিক্ষার্থী নিখোঁজের আগে মাস্টার্স শেষ করে দুই বছরের ক্বিরাত কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন।

পরিবারের ভাষ্য, মাদ্রাসায় পড়ার সময় বেলালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রায়ই তাঁর পরিবারের যোগাযোগ হতো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৫ জুলাই তাঁর বাবার সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল বেলালের। এরপর আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসায় গিয়েও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বেলালের পরিবার জানায়, সরকার পতনের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে তাঁর বড় ভাই সুমনের ফোনে একাধিক খুদেবার্তা আসে। এমন বার্তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এসেছিল। তাতে বেলাল বিপদে রয়েছেন দাবি করে উদ্ধারের আকুতি জানায়। বার্তাটি ছিল—‘আমার শরীর ভালো না, আমাকে উদ্ধার না করলে মারা যাব।’ পরে ১ সেপ্টেম্বর আরও একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে বেলালের সঙ্গে তাঁর বড় ভাইয়ের সরাসরি কথা হয়েছিল।

বেলালের বড় ভাই সুমন জানান, সর্বশেষ যখন বেলালের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তখন তিনি কোথায় আছেন—জানতে চাইলে জায়গাটা চেনেন না বলে জানান। এরপর এক বছর হয়ে গেল বেলালের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি সুমনের।

অজ্ঞাত নম্বর থেকে পাঠানো বার্তাগুলোর স্ক্রিনশট ও কথোপকথনের রেকর্ড আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে; যার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।

বেলাল নিখোঁজের বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বলছে, বেলাল হয়তো মাদ্রাসা থেকে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে পরিবারের দাবি, বেলাল যদি আত্মগোপনে যেতেন, তাহলে কেন তিনি সাহায্য চাইবেন?

বেলালের বড় ভাই সুমন বলেন, ‘নিখোঁজের পর আমরা মাদ্রাসার অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। “সিফাত” নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বেলালের ঝামেলা ছিল, সে তাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। আমার ভাই অপহৃত হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনায় জিডি, মামলা করলেও তদন্তের একটি পর্যায়ে এসে অগ্রগতি দেখছি না।’

গত বছরের ৩১ আগস্ট হাটহাজারী থানায় জিডি করে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর পরিবার। একই বছর ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালতে অপহরণের মামলা করে তারা। মামলায় মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী ও বেলালের সহপাঠী রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহ এবং দুই শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও মো. কাসেমকে আসামি করা হয়। ওই দিন আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের ভার দেওয়া হয় র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামকে।

জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ক্বিরাত বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় সে (বেলাল) আমার অধীনে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে থাকত। গত বছরের মে মাসে বেলাল কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে বের হয়, পরে মাসখানেক ফেরেনি। নিয়ম অনুযায়ী তার সিট তখন বাতিল করা হয়। পরে সে মাদ্রাসায় এসেছিল, কিন্তু সিট না থাকায় চলে গিয়ে বাইরে আশপাশে থাকা শুরু করে। আমি এতটুকুই জানি। কিন্তু নিখোঁজের পেছনে তার পরিবার আমাকে দোষারোপ করছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ ওই শিক্ষক আরও বলেন, ‘শুনেছি, সে (বেলাল) চাকরির খোঁজ করছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আত্মগোপনে গেছে।’

ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় আরেক অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

হাটহাজারী থানায় করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, বেলালের মোবাইল থেকে পাওয়া বার্তার সূত্র ধরে ট্র্যাক করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টে সেটি টেকনাফের মহেশখালী নোয়াপাড়ায় সক্রিয় ছিল। সেখানে অভিযান চালানো হলেও বেলালকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, মোবাইলটির স্থান একবারই শনাক্ত করা গেছে, পরে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিখোঁজের প্রায় দেড় মাস পর জিডি করায় সিসিটিভি ফুটেজও আর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ভাষায়, বেলাল সম্ভবত স্বেচ্ছায় মাদ্রাসা ত্যাগ করেছেন।

আদালতে করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, ‘মামলাটি পাওয়ার পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল উভয়ভাবে অনুসন্ধান চলছে। ঊর্ধ্বতন অফিসারেরাও এই মামলার বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। টেকনাফ-উখিয়ায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিকটিমকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি। তবে একটা ভালো কিছু আশা করছি। সময় হলে জানা যাবে।’

শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর নতুন নাম ‘শহীদ ওসমান হাদি’

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় কৃষক

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

বরগুনায় নদীভাঙন: ঝুঁকিতে আবাসন প্রকল্প, খাদ্যগুদাম

চিড়িয়াখানা ফাঁকা করে আবার প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় রাসিক

যশোর বিএনপি : ৩ আসনে প্রার্থী বদল, মাঠে বঞ্চিত ১০ জন

ডেমরায় ডিবি পরিচয়ে অপহরণচেষ্টাকালে আটক ৩