নরসিংদী জেলা সবজির ভান্ডার নামে সারা দেশে সুপ্রসিদ্ধ। জেলায় এবার সবজির ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তবে পাইকারি হাট ও খুচরা বাজারগুলোতে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় খরচ ওঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।
গতকাল শনিবার সকালে জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর পাইকারি সবজির হাট ঘুরে দেখা যায়, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারেরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে সবজি সংগ্রহ করছেন। ভরা মৌসুমে দাম কম থাকায় কৃষকদের মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন বেশি ও চাহিদা কম থাকার সুযোগে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছেন। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।
জানা গেছে, জেলার রায়পুরা, বেলাব ও শিবপুর উপজেলার সমতল ও উঁচু জমিতে সারা বছর সবজি চাষ হয়। এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। জেলায় প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাধাগঞ্জ, চরসুবুদ্ধি, পুটিয়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদ নামাপাড়া, জঙ্গি শিবপুর, গুগল নগর, বারৈচা, নারায়ণপুর, মরজালসহ বিভিন্ন স্থানে সাপ্তাহিক পাইকারি হাট বসে। এসব হাটে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণে মুখর থাকে।
পাইকারি বাজারে এ দিন দেখা যায়—আলু (প্রতি কেজি) ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০-৮০, শিম ১০-৪০, বেগুন ৩০-৪০, কাঁচামরিচ ৬০-৭০, পাকা টমেটো ৭০-৭৫, শসা ৪০, করলা ৬০, গাজর ৪০, পেঁপে ২০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৩৫, লাউ ১০-২০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫-১৫ (পিস), লালশাক ১৫ টাকা (আঁটি) ও ধনেপাতা ১০-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে আলু প্রতিকেজি ২৫ টাকা, বেগুন ৪০-৫০, পেঁয়াজ ৮০-৯০, শিম ২০-৫০, কাঁচামরিচ ৮০, পেঁপে ৩০, টমেটো ৮০, শসা ৪০, লাউ ২০-৪০ (পিস), শাকসবজি প্রতি আঁটি ৫-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কথা হয় কৃষক আবুল মিয়া, কামাল, মজনু মিয়া, স্বপন বিশ্বাস, আব্দুল মালেক, শ্যামল ও কাওছারের সঙ্গে। তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে সবজির ভালো দাম ছিল। বর্তমানে একসঙ্গে বেশি সবজি বাজারে আসায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। ফলে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারদর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি, ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কৃষি উপকরণের দাম কমাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।
উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ৪৬ শতক জমিতে সবজি চাষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিম খেতে কুয়াশায় পচন ধরেছে, যা কীটনাশক দিয়েও দূর করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। দাম কমে যাওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, খরচ তুলতেই কষ্ট হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুর রহিম বলেন, নরসিংদীর হাটগুলো থেকে কেনা সবজি সারা দেশে সরবরাহ হয়। এখন বাজারে সবজির জোগান বেশি।
খুচরা বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, হাটে কম দামে কিনে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, চলতি বছরে নরসিংদীতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৪ শ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১০ হাজার ৫ শ হেক্টরে সবজির চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও চাষিরা বাজারে ভালো দাম পেয়েছেন। বর্তমানে ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।