টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
আজ বুধবার সকাল থেকে নগরের আগ্রাবাদ, কাতালগঞ্জ, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, শুলকবহর, কাপাসগোলা, চকবাজার, হালিশহর, আতুরারডিপো, রাহাত্তারপুল, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় এই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে প্রথমে হালকা, পরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন অর্থাৎ আজ বুধবারও মুষলধারার এই বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এতে নগরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় বাসা থেকে বেরোতে যাত্রী ও পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল কম ছিল। কিছু কিছু সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
নগরের কাতালগঞ্জে বৌদ্ধমন্দির-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অলি আহমেদ বলেন, ‘শহরের অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা কমে গেছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিপাত হলে কাতালগঞ্জে জলাবদ্ধতা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সড়কে পানির মধ্য দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়।’
নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় কর্মস্থল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবেদ আমেরী জানান, অফিসে যাওয়ার রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকায় বাড়তি রিকশাভাড়া দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়েছে তাঁকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়সহ বেশির ভাগ এলাকার পানি দ্রুত নেমে যায়। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, পাঁচলাইশে হাজীপাড়াসহ কিছু এলাকায় সড়কে সামান্য পানিতে ডুবে ছিল। ওই পানির ওপর দিয়ে সাধারণদের যাতায়াত করতে হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, আজ ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অধিদপ্তরের তথ্যে, সাধারণত ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
নগরীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ জলাবদ্ধতা দূর করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বিভিন্ন বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সিডিএর মেগা প্রকল্পসহ মোট চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর পানির নিষ্কাশন উন্নত করার কাজ চলছে। এর জন্য মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হচ্ছে ৩৬টি খালের খনন ও সংস্কার; যার জন্য আলাদা বাজেট হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ আগামী বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৩৬টি খালের মধ্যে ২৫টির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ ও মুরাদপুর এলাকায় অবস্থিত হিজড়া খালের খনন ও সংস্কারকাজ এখনো শেষ হয়নি। অন্যদিকে আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতার বড় কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স-কালভার্টের ভেতরে জমে থাকা আবর্জনা ও ময়লা। বর্তমানে খালটির পরিষ্কারকাজ চলমান রয়েছে বলে সিডিএ জানিয়েছে।