হোম > সারা দেশ > ঢাকা

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন লায়লা আফরোজ এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আজ সোমবার সকালে নিজ বাসায় মা ও মেয়েকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহত দুজন হলেন লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের আমেনাস ড্রিম নামের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলায় এই জোড়া খুন হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজে খুনের আগে ওই বাসায় বোরকা পরে গৃহকর্মী আয়েশাকে (২০) ঢুকতে এবং প্রায় দেড় ঘণ্টা পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। পুলিশ ও ভবনটির অন্য বাসিন্দাদের সন্দেহ, চার দিন আগে নিয়োগ দেওয়া গৃহকর্মীই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, নিহত লায়লা আফরোজ গৃহিণী। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত। নাফিসার বাবা এ জেড এম আজিজুল ইসলাম পলাশ উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি প্রায় ১৩ বছর নিজস্ব ওই ফ্ল্যাটে থাকছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।

স্বজনেরা জানান, আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে প্রথমে দরজার পাশে মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখেন। পরে রান্নাঘরে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় স্ত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা আসেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লায়লা আফরোজকে উদ্ধার করে। নাফিসার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভবনটির একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় ঢোকেন গৃহকর্মী আয়েশা। ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে তিনি পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান। স্কুলড্রেসটি ছিল নিহত নাফিসার। ওই বাসা থেকে পুলিশ দুটি ছুরি উদ্ধার করেছে। খুনি হত্যার পর বাসার বাথরুম ব্যবহার করেছে, এমন আলামত পাওয়া গেছে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পর্যন্ত খুনের ঘটনায় গৃহকর্মীর জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনার আগে-পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ওই বাসায় একজন তরুণীকেই আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। আশপাশে আরও কেউ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাড়িটি রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের পাশে। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তম তলায় লিফটের সামনে থেকে আজিজুল ইসলামের বাসার দরজা পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দরজা থেকে বাসার ভেতরে মেঝেজুড়ে রক্ত।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত এবং মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় রয়েছে। বাসা থেকে কিছু খোয়া গিয়ে থাকতে পারে। প্রথমে লায়লা আফরোজকে এবং পরে তাঁর মেয়ে নাফিসাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। বাসার ইন্টারকমের তারও ছেঁড়া দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্টারকমে ফোন দেওয়ার সময় হত্যাকারী তার ছিঁড়ে ফেলেছে। খুনের পর বাসাতেই খুনি পোশাক পাল্টে রক্তমাখা কাপড় ব্যাগের ভেতরে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন লায়লা আফরোজ এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

নিহত লায়লা আফরোজের ভাই ইমদাদুল ইসলাম জানান, তাঁর দুলাভাই আজিজুল বাসায় ফিরে প্রথমে দরজায় নক করে সাড়াশব্দ পাননি, পরে দেখেন দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দরজার পাশে তিনি নাফিসার রক্তাক্ত দেহ এবং একটু দূরে রান্নাঘরে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখেন। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এলে মেয়ে বেঁচে আছে ধারণা করে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ বাসা থেকে লায়লার লাশ উদ্ধার করে।

মরদেহ দুটির সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। দুজনের শরীরের একাধিক স্থানে এলোমেলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ভবনটির ম্যানেজার মো. আয়ুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই পরিবার বাড়ির দারোয়ান খালেককে গৃহকর্মী দিতে বলেছিলেন। চার দিন আগে বোরকা পরা এক তরুণী গেটে এসে কাজের খোঁজ করলে দারোয়ান সপ্তম তলার ওই বাসায় পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা তরুণীর সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখেছিলেন। তাঁদের নিজস্ব ফ্ল্যাট। পরিবারে তিনজন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিজুল ইসলাম ফোন দিলে ওপরে গিয়ে ঘটনা বুঝতে পারেন।

নিহত লায়লাদের স্বজনেরা জানান, গৃহকর্মী আয়েশা তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরে এবং বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তাঁর শরীরেও পোড়ার ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকেন। স্থায়ী গৃহকর্মী না হওয়ায় তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা হয়নি।

দারোয়ান খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি পুলিশকে বলেছেন, চার দিন আগে বাসায় কাজের জন্য আসায় ওই তরুণীকে শিক্ষকের ফ্ল্যাটে পাঠিয়েছিলেন। তরুণী তাঁর পূর্বপরিচিত নন। ওই বাসায় কাজ করতেন বলে আজ সকাল ৭টার পর তরুণী আসায় তিনি ভেতরে ঢুকতে দেন। তবে বের হওয়ার সময় স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরা থাকায় এবং কাঁধে ব্যাগ থাকায় তিনি তরুণীকে চিনতে পারেননি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি। সেসব যাচাই-বাছাই চলছে। পলাতক গৃহকর্মী তরুণীকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই ঘটনার রহস্য জানা যাবে।’

দল মনোনয়ন দিল পটুয়াখালী-১, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা দিলেন পটুয়াখালী-৪ আসনে

চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় বন্দী ৭ বছরের শিশুকে আদালতের আদেশে মুক্তি

আয়ে ২ কোটি টাকার গরমিল, সাবেক মন্ত্রীর এপিএস নুর খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সিরাজগঞ্জে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

লক্ষ্মীপুরে জেএসডির জনসভায় আসার পথে হামলা-ভাঙচুর, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫

বিএনপির মনোনয়ন বিরোধে বাউফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই

মোহনগঞ্জে এক গ্রাম থেকে তিন এমপি প্রার্থী

মোহাম্মদপুরে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ২৩ শতাংশ শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে: গবেষণা

প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে কবজি বিচ্ছিন্ন, আটক ৫