ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির ওপরের উর্বর অংশ (টপ সয়েল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেই মাটি কাটার মহোৎসব চলছে মাঠে মাঠে। নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এ চিত্র মাগুরার মহম্মদপুরের। জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, অন্যদিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মধুমতী সেতু ও আশপাশের পরিবেশ।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুমতী সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরঘেঁষা এলাকায় গড়ে ওঠা ৫টি অবৈধ ইটভাটার জন্য জায়গা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পাশেই ইট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহে অবাধে কাটা হচ্ছে আবাদি জমি। একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষা, পাট ও মরিচের ব্যাপক আবাদ হলেও এখন খননযন্ত্রের আঘাতে তা পরিণত হয়েছে গর্ত-খানাখন্দপূর্ণ অনুর্বর ভূমিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮টি ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস থেকেই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি শুরু হয়। ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভাটামালিকেরা কৃষিজমির উর্বর অংশ ক্রয় করেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪ মাস চলে আবাদি জমির টপ সয়েল কর্তনের হিড়িক। এসব কারণে দিন দিন ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় বলেন, টপ সয়েল হলো আবাদি জমির পুষ্টি-প্রাণ। এই মাটি কেটে নেওয়া হলে কমপক্ষে ১০ বছর ওই জমিতে ভালো ফলন আশা করা যাবে না। ফলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকছে।
ইউএনও মুহ. শাহনুর জামান বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আবাদি জমি রক্ষা করতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ করে নয়; বরং কৃষক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।’