সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষক নাজমা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকেন, বিদ্যালয়ে যান না। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর হচ্ছে নিয়মিত। বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও মিলছে তাঁর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজমা আক্তারের হয়ে স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন হ্যাপি আক্তার নামে এক স্নাতকপড়ুয়া। খাতায় নাজমা আক্তারের স্বাক্ষর করছেন হ্যাপি। এমন ঘটনা নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার রোকেয়া সাত্তার চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধনু নদের তীরঘেঁষা নূরারীপুর গ্রামে ২০১৮ সালে স্থাপিত হয় রোকেয়া সাত্তার চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৭৪ শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমা আক্তার। তিনি ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। বিদ্যালয়ে না গেলেও নাজমা আক্তারের নামে শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করা হচ্ছে। নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজমা আক্তার ঢাকায় বসবাস করেন। নাজমা আক্তারের হয়ে প্রক্সি দিচ্ছেন স্নাতকপড়ুয়া হ্যাপি আক্তার। হ্যাপি আক্তার তাঁর নামেই পাঠদান ও শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। আর এই অনিয়মে সহায়তা করছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরীফা আক্তার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর মধ্যে নাজমা আক্তার বিদ্যালয়েই আসেন না। তিনি থাকেন ঢাকায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
গত ২৮ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে দুজন উপস্থিত। আর নাজমা আক্তার বিদ্যালয়ে হাজির না থাকলেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে।
জানতে চাইলে হ্যাপি আক্তার স্বীকার করেন, ‘নাজমা ম্যাডাম ঢাকায় আছেন। এ জন্য কয়েক মাস তাঁর ক্লাস আমি নিচ্ছি। ম্যাডামের কথা মতো, শিক্ষক হাজিরা খাতায় আমি “নাজমা” লিখে স্বাক্ষর করছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।’
প্রধান শিক্ষক শরীফা আক্তার বলেন, ‘নাজমা আক্তার আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। আমি ভয়ে শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানাইনি।’
শিক্ষক নাজমা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকার কারণে ঢাকায় আছি। হ্যাপি আক্তারকে দিয়ে আমার শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করানো ঠিক হয়নি।’
খালিয়াজুরী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু রায়হান বলেন, ‘নাজমা আক্তার নামের এক শিক্ষক ঢাকায় আছেন। বিদ্যালয়ে না এসেও অন্যজনকে দিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করাচ্ছেন বলে শুনেছি। এটি নিয়মবহির্ভূত। নাজমা আক্তারসহ বিদ্যালয়ের যারা এই কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার জন্য সুপারিশ করা হবে।’
আরও খবর পড়ুন: