মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পে রাজাকারের পাঠ’ শীর্ষক নাটক মঞ্চায়ন নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়ালো লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়। নাটকে রাজাকারের চরিত্রে অভিনেতাদের পাঞ্জাবি ও টুপি পরিধান এবং নারী নির্যাতনের দৃশ্য প্রদর্শিত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতারা বাধা দেন। তাঁদের অভিযোগ, এই পোশাকে অভিনয় করা ‘মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার আলেকজান্ডার আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ মাঠে কুচকাওয়াজের পর এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও ফুটেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটির ১২ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী নাটকটিতে অংশ নেন, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের মধ্যকার সংঘাতময় চিত্র তুলে ধরা হয়। রাজাকারের ভূমিকায় কয়েকজন শিক্ষার্থী পাঞ্জাবি-টুপি পরে অভিনয় করছিলেন। এই দৃশ্যে নারী নির্যাতনের অংশ থাকাকালীন উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম এবং পৌর আমির আবুল খায়ের মঞ্চে এসে আপত্তি তোলেন। তাঁরা দাবি করেন, এই পোশাকে রাজাকারের চরিত্র চিত্রায়ণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ আশরাফ উদ্দিনের কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেন।
এতে দুই পক্ষের মধ্যে মঞ্চেই শুরু হয় তীব্র বাগ্বিতণ্ডা। পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল, তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন এবং রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দ্রুত তাঁরা হস্তক্ষেপে করলে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়।
উপজেলা জামায়াতের আমির আবদুর রহিম তাঁর আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘পাঞ্জাবি-টুপি পরে অভিনয় করায় একজন মুসলমান হিসেবে আমি এটি মেনে নিতে পারিনি। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। পরে ইউএনও ও ওসি সাহেবের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হয়েছে।’
কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ আশরাফ উদ্দিন এই ঘটনাকে ‘ভুল–বোঝাবুঝি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, পরে সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে নাটক চলাকালে পাঞ্জাবি-টুপি ব্যবহার নিয়ে এক পক্ষ আপত্তি তোলায় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে দ্রুতই বিষয়টির সমাধান করা হয় এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।