ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠিতে তৃতীয় দিনের মতো বরিশাল-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেছে ছাত্র-জনতা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ায় দূরপাল্লার যাত্রীসহ পণ্যবাহী যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ২টা থেকে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড় এলাকায় বরিশাল-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
এর ফলে কলেজ মোড়ের দুই পাশে কয়েক শ যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। আটকে পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি বাসের যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওসমান হাদির খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা উচিত। কিন্তু সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা মোটেও ঠিক নয়।’
ঢাকা থেকে বরগুনার পাথরঘাটাগামী বাসের এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল হাদি ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আজ ফেরার পথে কলেজ মোড়ে এসে অবরোধে আটকে পড়েছি। এভাবে মানুষ ও পণ্যবাহী যানকে ভোগান্তিতে ফেলা কাম্য নয়।’
পিরোজপুরগামী বাসের যাত্রী হনুফা বেগম বলেন, ‘ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার দাবি সমর্থন করি। কিন্তু রাস্তা আটকে রাখার কারণে নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আসলাম ফরাজী বলেন, ‘জরুরি কাজে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। কিন্তু ঝালকাঠিতে এসে সড়ক অবরোধের কারণে আটকা পড়েছি। এখন বিকল্প উপায়ে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
আরেক যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেও আন্দোলন করা যায়। আমরাও চাই খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসের সুপারভাইজার বলেন, ‘বরিশাল থেকে পিরোজপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবরোধের কারণে বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাক সামনে এগোতে পারছে না। এতে যাত্রী ও মালবাহী যানবাহনের ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। আগের দুই দিনেও একই পরিস্থিতি হয়েছে।’
অবরোধকারীদের পক্ষে ঝালকাঠি গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সাগর বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এত দিন পার হলেও মূল খুনিদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, ‘হামলায় জড়িত খুনিদের এখনো সরকার গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পারেনি।’
জেলা কমিটির আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা (ডিসি ও এসপি) ঘটনাস্থলে এসে আমাদের দাবি না শোনা পর্যন্ত আমরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করব না।’
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবরোধের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’