কূটনৈতিক নানা তৎপরতা সত্ত্বেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শিগগির শেষ হবে—এমন সম্ভাবনা খুব কমই বলা যায়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে এ ধরনের আগ্রাসন বিভিন্ন দিক থেকে চাপে ফেলেছে রাশিয়াকে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন করছে দেশটিকে। রয়েছে অভ্যন্তরীণ চাপও। ফলে সার্বিকভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতার মসনদ নড়বড়ে হয়ে গেছে কি না কিংবা গণবিদ্রোহ বা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে তাঁর অপসারিত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না—উঠতে শুরু করেছে এমন নানা প্রশ্ন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার আগে অভ্যন্তরীণ কোনো বাধা ছাড়াই ইউক্রেনের স্বাধীনতাকামী দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন পুতিন। এর মাধ্যমেই মূলত স্পষ্ট হয়ে যায় যে পুতিনের পেছনে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকেই অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বিরোধীদের এক জোট হওয়ার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
যদিও এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে ইউক্রেনীয় সমাজবিজ্ঞানী ভলোদিমির ইশচেনকোর। তাঁর মতে, রাশিয়ায় বিদ্রোহ বা আন্দোলনের মাধ্যমে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। এক সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, রাশিয়া পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ফলাফল বিপ্লব—এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ, বিপ্লবের জন্য অভিজাতদের মধ্যে বিভক্তি এবং বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হয়।
‘কঠিন পরিণতি’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নতুন বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে চলছেন অনেক রাশিয়ান। কারণ, যুদ্ধের বিরোধিতা করলে পুতিনের কাছে তাঁরা বিবেচিত হবেন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। আর পুতিনবিরোধীদের পরিণতি কী হয়, তা কমবেশি সবারই জানা।
তবে সংকটের ভিন্ন একটি দিক তুলে আনছেন অনেকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রায় দুই বছর ধরে শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রেখেছেন পুতিন। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে অলিখিতভাবেই ক্ষমতা কবজায় নিতে পারে স্থানীয় প্রশাসন। আর তেমন হলে অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ ছাড়াই পাল্টে যেতে পারে রাশিয়ার রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার চিত্র।