পেরুভিয়ান আমাজন। গাছপালার মাঝখানে পাথরের ওপর দিয়ে তর তর করে বয়ে চলেছে এক নদী। তবে এটি আর দশটা সাধারণ নদীর মতো নয়। কাছাকাছি গেলেই চমকে উঠবেন, নদীর জল থেকে বাষ্প উঠছে। পানির তাপমাত্রা কোনো কোনো অংশে উঠে গেছে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। অর্থাৎ, বেভুলে এতে হাত বা পা দিলেই সর্বনাশ, ফোসকা পড়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন নদীটি পবিত্র আর এর উষ্ণ জলে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে। স্থানীয় ওঝা আর শামান বা ওঝারা এই পানিকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাজে লাগান।
অবশ্য আমাজন নদীর এই শাখার কথা বিশ্ববাসী জানতে পারে আন্দ্রেজ রুজো নামের এক গবেষকের মাধ্যমে। বালক বয়সে রুজো তাঁর পেরুভিয়ান নানার কাছে শোনে ফুটন্ত এক নদীর গল্প, যার নাম শ্যানায়-টিমপিশকা। পেরুভিয়ান এই নামের অর্থ, ‘সূর্যের উত্তাপে ফুটতে থাকা’।
২০১১ সালের নভেম্বরে খালার সঙ্গে মধ্য পেরুতে এক অভিযানে যান উত্তপ্ত ওই নদী দেখার জন্য। পেরুর পুকালপা শহর থেকে গোটা ভ্রমণে সময় লাগে চার ঘণ্টা। এর মধ্যে আছে গাড়িতে দুই ঘণ্টার যাত্রা, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৪৫ মিনিটের ভ্রমণ এবং ভেজা, পিচ্ছিল জঙ্গলের পথে সোয়া ঘণ্টা হেঁটে যাত্রা। নদীটির কাছেই ছোট্ট এক শহরতলি, নাম মায়ানতুয়াচু। এই শহরে অবস্থান করা শামান বা ওঝাই নদীটির দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত। নদীটি নিয়ে গবেষণার জন্য শামানের বিশেষ অনুমতি নিলেন রুজো। শেষ পর্যন্ত শামানের সহকারী রুজোকে নিয়ে গেল চার মাইল দৈর্ঘ্যের ওই টগবগ করে ফুটতে থাকা জলের নদীর কাছে।
রুজোর পায়ে ছিল কেবল চটি, তাই খুব সাবধানে পাথরে পা ফেলে নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। দেখলেন গড়ে পানির তাপমাত্রা ১৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পানি ফুটছে আক্ষরিক অর্থে এমনটা যদি বলা না-ও যায়, পানি অনেক গরম, আর সেখান থেকে বাষ্প উঠছিল।
নদীর পানির ওই আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য রুজোকে অবাক করে দেয়। কারণ এটির অবস্থান কোনো আগ্নেয়গিরির কাছে নয়। পরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনে রুজো লিখেন, ‘পৃথিবীতে কিছু ফুটন্ত নদী আছে সন্দেহ নেই। তবে এগুলোর অবস্থান সব সময়ই আগ্নেয়গিরির কাছে থাকে।’
পরবর্তী সময়ে নদীটিকে রক্ষা করার জন্য এবং নদীর নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রেখে গবেষণার জন্য ‘বয়েলিং রিভার’ প্রজেক্ট শুরু করেন রুজো। বলা চলে, এখন নদীটি এবং এর চারপাশের জঙ্গল রক্ষায় নিজের জীবনকে নিয়োজিত করেছেন রুজো। ফুটন্ত নদী নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেছেন বই, ‘দ্য বয়েলিং রিভার: অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ডিসকভারি ইন দ্য আমাজন’।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, এটলাস অবসকিউরা