দুর্গম পর্বতের গায়ে ঝুলন্ত মন্দিরটি দেখে প্রথম যে প্রশ্ন মনে উদয় হবে তা হলো, খাড়া পাথুরে ঢালে এটি আটকে আছে কীভাবে? যখন শুনবেন, এর বয়স দেড় হাজার বছরেরও বেশি তখন নিশ্চয় মাত্রা ছাড়াবে বিস্ময়।
চীনের সানজি প্রদেশের দাতোং শহরের কিলোমিটার ষাটেক দক্ষিণ-পূর্বে হ্যাংশান পর্বতে গায়ে তৈরি করা হয়েছে মন্দিরটি। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে স্থাপত্যবিদ্যার দুর্লভ এক উদাহরণ বলতে পারেন একে। মাটির থেকে মোটামুটি ৭৫ মিটার বা ২৪৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় মন্দিরটি। পর্বতের পাথুরে শরীরকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কাঠের দৃষ্টিনন্দন সব কাজ চোখে পড়ে মন্দিরটিতে।
ধারণা করা হয় বন্যা, বৃষ্টি, তুষার এবং রোদ থেকে সুরক্ষা দিতে এমন জায়গায় বানানো হয় মন্দিরটি। প্রাকৃতিক একটি খাঁজের মধ্যে তৈরি করায় স্বাভাবিকভাবেই এটি বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কম। উপত্যকার ওপরে শুষ্ক পাহাড়ে অবস্থিত বলে স্যাঁতসেঁতে ভাবও দেখা দেয় না এর দেয়ালে।
হ্যাংগিং টেম্পল বা ঝুলন্ত মন্দির হ্যাংগিং মনাস্ট্রি বা হ্যাংশান হ্যাংগিং টেম্পল নামেও পরিচিত। কিংবদন্তি আছে লিয়াও রান নামের এক ভিক্ষু পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দিকে মন্দিরটি তৈরি করেন। অবশ্য ১৯০০ সালের দিকে বড় ধরনের সংস্কার করা হয় এর।
সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো, এই ঐতিহাসিক স্থানটি শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয় বরং তিনটি ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র এক জায়গা। বৌদ্ধ ধর্ম, তাওবাদ এবং কনফুসীয়বাদ প্রাচীন এই মন্দির বা গুম্ফার মধ্যে চর্চা করা হতো। সানজিয়াও বা থ্রি রিলিজিয়নস হলে বুদ্ধের মূর্তির পাশাপাশি তাওবাদ এবং কনফুসীয় মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা লাওৎসে এবং কনফুসিয়াসের মূর্তি আছে।
তুলনামূলকভাবে দুর্গম এলাকায় অবস্থানের কারণে মন্দিরটি পর্যটকদের বিশ্রামের জায়গা হিসেবেও কাজ করত। স্বাভাবিকভাবেই লোকেরা ভিন্ন ধর্মের মানুষ উপাসনা করে এমন স্থানে থামতে অনিচ্ছুক ছিল। ঝুলন্ত মন্দিরটি চীনের তিনটি ধর্মের কথা মাথায় রেখে গড়ে তোলার একটি বড় কারণ, বেশি পর্যটক বা দর্শনার্থী যেন সেখানে থাকতে পারেন।
উত্তর প্যাভিলিয়নটিও তিনতলা, প্রস্থে ৪ মিটার, কিন্তু দৈর্ঘ্য ৭ মিটার বা ২৩ ফুট। এই প্যাভিলিয়নের অভ্যন্তরে তৃতীয় তলায় একটি হলেই বুদ্ধের মূর্তির পাশাপাশি লাওৎসে এবং কনফুসিয়াসের মূর্তি আছে। লং ব্রিজ বা লম্বা সেতুটি দুটি প্যাভিলিয়নকে সংযুক্ত করে। এটি ১০ মিটার বা ৩২ ফুট লম্বা।
ঝুলন্ত মন্দিরে বছরের যে কোনো সময়ই যেতে পারেন। তবে দাতোং এলাকার আবহাওয়া বিবেচনায় আনলে এপ্রিল থেকে অক্টোবর ভ্রমণের সেরা সময়। এখানে অবশ্য গ্রীষ্ম স্বল্পস্থায়ী। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত থাকে হাড় কাঁপানো শীত। আর পার্বত্য এলাকা হওয়ায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার বড় পার্থক্য থাকে। তাই এমনকি গ্রীষ্মে ভ্রমণে এলেও সঙ্গে গরম পোশাক সঙ্গে রাখাটা জরুরি। তবে সেখানে একবার পৌঁছে গেলে যে পর্বতের গায়ে আটকে বা ঝুলে থাকা মন্দিরটি দেখে মুগ্ধ হবেন তাতে সন্দেহ নেই।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, সিজিটিএন, চায়না হাইলাইটস, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট