বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এখনো শীর্ষে রয়েছেন। ২০২৫ সালের নভেম্বরের শুরুতে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা অক্টোবরের তুলনায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। যদিও অক্টোবরে তিনি দুবার ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছিলেন, মাস শেষে কিছুটা কমে তা ৪৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মাস্ক এখন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের চেয়ে ১৭৭ বিলিয়ন ডলার এগিয়ে। অক্টোবরে টেসলার শেয়ার বেড়েছে ৩ শতাংশ, কিন্তু এলিসনের ওরাকলের শেয়ার কমেছে ৭ শতাংশ, ফলে তাঁর সম্পদ কমেছে ২২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৮১ বছর বয়সী এলিসনের সম্পদ ৩২০ বিলিয়ন ডলার।
অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। কোম্পানির তৃতীয় ত্রৈমাসিক আয়ে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় শেয়ারমূল্য কমে গেছে ১২ শতাংশ। ফলে তাঁর সম্পদ ২৯ বিলিয়ন ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ২২৩ বিলিয়ন ডলারে। এতে তিনি ধনী তালিকায় তৃতীয় স্থান থেকে নেমে পঞ্চম স্থানে চলে গেছেন।
অন্যদিকে অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ভাগ্য খুলেছে। অক্টোবরে অ্যামাজনের শেয়ার বেড়েছে ১১ শতাংশ, ফলে বেজোসের সম্পদ বেড়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদ ২৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং তিনি এখন তৃতীয় ধনী ব্যক্তি।
অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন। অ্যালফাবেটের শেয়ারমূল্য ১৬ শতাংশ বাড়ায় তাঁদের সম্পদ যথাক্রমে ৩০ ও ২৮ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩২ ও ২১৫ বিলিয়ন ডলারে। এতে পেজ উঠে এসেছেন চতুর্থ স্থানে আর ব্রিন রয়েছেন ষষ্ঠ অবস্থানে।
ডেল টেকনোলজিস ও ব্রডকমের শেয়ার বাড়ায় মাইকেল ডেলের সম্পদ ১৪ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। বর্তমানে তাঁর সম্পদ ১৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা তাঁকে ১১ থেকে ১০ নম্বরে তুলে এনেছে। এদিকে কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের সম্পদ কমে ১৪৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং তিনি দীর্ঘ সময় পর প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশের বাইরে চলে গেছেন।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিলে বিশ্বে ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার ছিলেন। নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর মোট সম্পদ ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বেশি।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী (১ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত)
১. ইলন মাস্ক—৪৯৭ বিলিয়ন ডলার
২. ল্যারি এলিসন—৩২০ বিলিয়ন ডলার
৩. জেফ বেজোস—২৫৪ বিলিয়ন ডলার
৪. ল্যারি পেজ—২৩২ বিলিয়ন ডলার
৫. মার্ক জাকারবার্গ—২২৩ বিলিয়ন ডলার
৬. সের্গেই ব্রিন—২১৫ বিলিয়ন ডলার
৭. বার্নার্ড আর্নল্ট—১৮৩ বিলিয়ন ডলার
৮. জেনসেন হুয়াং—১৭৬ বিলিয়ন ডলার
৯. স্টিভ বালমার—১৫৬ বিলিয়ন ডলার
১০. মাইকেল ডেল—১৫৫ বিলিয়ন ডলার
অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক ইলন মাস্ক
৫৪ বছর বয়সী মাস্ক বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিনি টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের চেয়ারম্যান ও সিটিও। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থা এক্সএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মাস্ক ১৮ বছর বয়সে কানাডায় যান। পরে যুক্তরাষ্ট্রে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন। ২০০২ সালে তিনি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরের বছর টেসলায় বিনিয়োগ করেন। ২০১০ সালে টেসলা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
বর্তমানে মাস্কের মালিকানাধীন এক্সএআই সংস্থার মূল্য ৮০ বিলিয়ন ডলার আর স্পেসএক্সের মূল্য ৪০০ বিলিয়ন ডলার।
এআই অবকাঠামোয় বড় বিনিয়োগ করছেন ল্যারি এলিসন
ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের সম্পদ ৩২০ বিলিয়ন ডলার। তিনি জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘স্টারগেট প্রজেক্ট’-এ যুক্ত হন, যেখানে ওরাকল, ওপেনএআই, সফটব্যাংক এবং ইউএইর এমজিএক্স ফান্ড মিলে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
এলিসন ১৯৭৭ সালে ওরাকল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৪ পর্যন্ত কোম্পানির সিইও ছিলেন। তিনি হাওয়াইয়ের লানাই দ্বীপের ৯৮ শতাংশের মালিক।
অ্যামাজন ও ব্লু অরিজিনের কর্তা জেফ বেজোস
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদ এখন ২৫৪ বিলিয়ন ডলার। তিনি ১৯৯৪ সালে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন, যা শুরু হয় অনলাইন বই বিক্রির মাধ্যমে। পরে ক্লাউড সেবা ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে প্রসারিত হয় ব্যবসা।
তিনি এখন ব্লু অরিজিন নামের বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা পরিচালনা করছেন এবং এর মাধ্যমে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি নারী নেতৃত্বাধীন এক মহাকাশ মিশন সম্পন্ন করেছেন।
অন্যদের মধ্যে ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁরা এখনো অ্যালফাবেটের নিয়ন্ত্রণে আছেন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নতুন উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।
বার্নার্ড আর্নল্ট, ফরাসি বিলাসবহুল ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের প্রধান, ১৮৩ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে সপ্তম স্থানে। জেনসেন হুয়াং, এনভিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ উৎপাদনে সাফল্যের কারণে তাঁর সম্পদ বেড়ে ১৭৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। স্টিভ বালমার, মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও ও এলএ ক্লিপার্সের মালিক, নবম স্থানে রয়েছেন। মাইকেল ডেল, ডেল টেকনোলজিসের কর্তা, দশম স্থানে উঠে এসেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী
২০২৫ সালের নভেম্বর অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হলেন ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের কন্যা অ্যালিস ওয়ালটন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন ডলার। তিনি বর্তমানে বিশ্বের ১৫তম ধনী ব্যক্তি।