হোম > প্রযুক্তি

ইমতিয়াজ নওশের

বিওয়াইডি বাংলাদেশে সব গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চায়

মোস্তাফিজ মিঠু

ছবি: মেহেদী হাসান

বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা ব্র্যান্ড বিওয়াইডি। তাদের নতুন উদ্ভাবন চমকে দিচ্ছে নিয়মিত। বাংলাদেশে ব্র্যান্ডটির যাত্রা শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। দেশের বাজারে বিওয়াইডির অগ্রগতি, বৈদ্যুতিক গাড়ির চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিওয়াইডি বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার ইমতিয়াজ নওশেরের মুখোমুখি হয় আজকের পত্রিকা। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু

বিওয়াইডি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিত একটি ব্র্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশে এর যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। আলোচনার শুরুটা আপনাদের মূল পরিচয় ও কার্যক্রম নিয়ে শুনতে চাই।

বিওয়াইডি অর্থ বিল্ড ইউর ড্রিম। শুরুতে যখন আমাদের গাড়ি উৎপাদন করি, তখন এই লাইনটা লেখা থাকত। পরে সংক্ষিপ্ত করা হয়। বিওয়াইডি শুধু গাড়ি তৈরি করে না, এটি একটি টেক প্রতিষ্ঠান। এখানে চার-পাঁচটা বিভাগ আছে। এখন বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ নিয়ে সচেতন হচ্ছে। আমাদের ব্র্যান্ড ভিশন ‘টু কুল দ্য আর্থ বাই ওয়ান ডিগ্রি’। আমরা পৃথিবীকে এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ঠান্ডা করতে চাই। ১৯৯৫ সালে ব্যাটারি তৈরি দিয়ে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। নব্বইয়ের মাঝামাঝি মোবাইল ফোনের উত্থান শুরু হয়। তখনকার মোবাইল ফোনগুলো এখনো যদি পান, খুলে দেখবেন সেখানে বিওয়াইডির ব্যাটারি। আজ অবধি এই প্রতিষ্ঠান সেরা ব্যাটারি তৈরি করে। প্রায় আট বছর পর ২০০৩ সালে শিয়ান চিনচুয়ান অটোমোবাইল কিনে তারা প্রথম গাড়ি ব্যবসায় প্রবেশ করে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিওয়াইডির নিজস্ব ডিজাইনের প্রথম উৎপাদিত পেট্রলচালিত গাড়ি নিয়ে আসে ২০০৫ সালে। তার নাম ছিল বিওয়াইডি এফথ্রি। পরে ২০০৮ সালে তাদের প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি এফথ্রিডিএম বাজারে আনে। এরপর ২০০৯ সালে আসে তাদের প্রথম ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘ই-সিক্স’। একটি বিষয় বলে রাখি, প্লাগ-ইন হাইব্রিড বিওয়াইডির ইনোভেশন। তারাই প্রথম এই প্রযুক্তি নিয়ে আসে। বাংলাদেশে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০২৪ সালের মার্চে। এখন পর্যন্ত বিক্রির দিক থেকে বিওয়াইডি বেশ ভালো পর্যায়ে আছে।

আপনি বলছিলেন, গাড়ি ছাড়া আরও সেগমেন্টে বিওয়াইডির ব্যবসা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ব্যাটারির কথা বললেন। এসব বিষয়ে বলুন।

বিওইয়াইডি রেইল ট্রানজিট নিয়ে কাজ করে, গ্রিন এনার্জির ব্যবসা রয়েছে। ২০১৯ থেকে এই প্রতিষ্ঠান ব্লেড ব্যাটারি নিয়ে আসে। এটি হলো বিওয়াইডির তৈরি নতুন ধরনের লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি। এটাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাটারি। বিওয়াইডির অনেক প্রতিযোগী এই ব্যাটারি ব্যবহার করে। আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানকে শুধু গাড়ির প্রতিষ্ঠান হিসেবে জানি। কিন্তু ব্যবসার পরিধি এখন অনেক বড়। এখন নতুন করে চার্জিং স্টেশন যোগ হয়েছে।

বাংলাদেশে প্লাগ-ইন হাইব্রিড বা ইভি গাড়ির যাত্রা নতুন। স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। এই বিষয়ে কী বলবেন?

চ্যালেঞ্জের আসলে শেষ নেই। আমরা যখন শুরু করি, তখন এনইভি (নিউ এনার্জি ভেহিক্যাল) গাড়ি সম্পর্কে অনেকে জানত না। বিওয়াইডি বাংলাদেশে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে আমরাই শুধু নয়, অন্যান্য এনইভি গাড়ির প্রতিষ্ঠানও সুবিধা নিতে পারছে। এ কারণে তারা আমাদের বেশ প্রশংসা করেছে এবং উৎসাহ দিচ্ছে। এ ছাড়া বিওয়াইডি নিয়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা চলছে, সেগুলো কিন্তু আমাদের গ্রাহকেরা দেখছেন। এই সুনাম আমাদের কাজগুলো আরও সহজ করেছে। তবে আমাদের দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখানে নেপালের উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও সহজ হবে। সেখানে ইমপোর্ট ডিউটি থেকে একটা গাড়ি বাজারে আনা পর্যন্ত পথটা খুব মসৃণ। এতে করে ব্যবসায়ীদের অনেক প্রতিবন্ধকতা কমে যায়। আমরা শুনেছি, বাংলাদেশেও এমন একটা পলিসি করা হচ্ছে। এমনটা হলে আশাবাদী, আমাদের এখানেও আরও সহজে গাড়ি বাজারজাত করা যাবে। এ ছাড়া বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চার্জিং স্টেশন। এখানে সরকার থেকে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান—সবার এক হয়ে কাজ করতে হবে।

যদিও আমরা প্রতিটা গাড়ির সঙ্গে হোম চার্জার দিই। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ। আবারও যদি নেপালের উদাহরণে যাই, সেখানে সরকারের বিনিয়োগে প্রায় ৬০টি ডিসি ফার্স্ট চার্জিং স্টেশন করেছে। এটা শহর থেকে দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও এখন রয়েছে। এটা অনেক বড় সাপোর্ট।

ছবি: মেহেদী হাসান

বিওয়াইডি বা অন্যান্য বেসরকারি উদ্যোগ কি চার্জিং স্টেশন নিয়ে কাজ করছে?

হ্যাঁ। করা হচ্ছে। ২০২৫ এসে আমরা এটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। কারণ, এখন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো মোটামুটি কাভার করা হয়েছে। ঢাকা থেকে উত্তরে গেলে সেখানে বগুড়া ও রাজশাহীতে পাবেন। অন্যদিকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাতেও রয়েছে। সিলেটের দিকেও পাবেন। এ ছাড়া খুলনার দিকে কাজ হচ্ছে। আমাদের গাড়িগুলো একবার চার্জে ৪২০ থেকে ৫২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে। তাই আমাদের দেশে সাধারণত যে দূরত্ব, সেটা কাভার করা খুব কঠিন কিছু নয়।

কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রির পরিসর বাড়াতে সরকার থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা আশা করছেন?

সরকার থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং এর যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আয়কর থেকে অব্যাহতি পাবে। এমন একটি নীতি সরকার নিয়েছে। এটার প্রয়োগ খুব দ্রুত আশা করি। এটি হলে আমাদের সম্ভাবনা আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে। গ্রাহকেরা কম দামে বৈদ্যুতিক গাড়ি পাবেন। অন্যদিকে শুধু আমরা নই, এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত সবার লাভ হবে।

বাংলাদেশে আপনাদের যে গাড়িগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো দাম কেমন?

এখন পর্যন্ত বিওয়াইডির যেসব গাড়ি দেশের বাজারে রয়েছে, সেগুলোর দাম ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন দামে গাড়ি পাওয়া যায়। বিওয়াইডি বাংলাদেশের সব ধরনের গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চায়। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন গাড়ি আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিওয়াইডির বড় প্রতিযোগী টেসলা ছাড়াও অনেকে এখন বাজারে আছে। কোন বিষয়গুলো আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে আলাদা করে মনে করেন?

বিওয়াইডি সব সময় উদ্ভাবনের মধ্যে থাকে। প্রতিনিয়ত তারা নতুন অনেক কিছু উদ্ভাবন করে। আমি প্রথম যখন চীনের অফিসে যাই, দেখলাম, তাদের একটা পেটেন্ট দেয়াল আছে। যেখানে তারা তাদের পেটেন্টগুলো ঝুলিয়ে রাখে। তখন সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। তিন মাসে সেটি এখন প্রায় ৫০ হাজার। এটিই বিওয়াইডিকে আলাদা করে।

তারা এমন কিছু উদ্ভাবন করছে প্রতিনিয়ত, যেগুলোর তাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রযুক্তির দখল কার হাতে

গুগলের নতুন এআই টুল

বৈদ্যুতিক জাহাজ নির্মাণশিল্পে চীনের আধিপত্য

পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা কতটুক: জেনে নিন বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড

ভুয়া ওয়েবসাইট চেনার উপায়

আগুনের ঝুঁকিমুক্ত ব্যাটারি বানালেন বিজ্ঞানীরা

উসকানিমূলক কনটেন্ট বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার

উসকানিমূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেটাকে বিটিআরসির চিঠি

বিবিএসের জরিপ: ইন্টারনেটের আওতার বাইরে দেশের ৪৪% পরিবার

ডিজিটাল রূপান্তর মানে শুধু অ্যাপ নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব