প্রতিদিনই নানা বিষয়ে জ্ঞান আহরণের জন্য ওপেনএআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির দ্বারস্থ হই আমরা। কোনো কিছু নিয়ে জানার আগ্রহ হলেই চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করে বসি। গত জুলাইয়ে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসকে চ্যাটজিপিটি জানিয়েছিল, দিনে গড়ে ২৫০ কোটির বেশি প্রম্পট বা প্রশ্ন পেয়ে থাকে তারা। এবার এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রশ্নকর্তা যত রূঢ়ভাবে প্রশ্ন করে বা নির্দেশ (প্রম্পট) দেয়, চ্যাটজিপিটি তত নির্ভুল ও সঠিকভাবে উত্তর দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি (পেন স্টেট)-এর এক নতুন গবেষণায় এই ফল পাওয়া গেছে বলে ফরচুন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে জানা গেছে।
গবেষকেরা ওপেনএআইয়ের জিপিটি-৪ও (GPT-4 o) মডেলে ২৫০টির বেশি ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা (প্রম্পট) পরীক্ষা করেছেন। এগুলোর মধ্যে কিছু ছিল অত্যন্ত ভদ্র আর কিছু ছিল একেবারেই রূঢ় ভাষায়। এই পরীক্ষার ফল ছিল চমকপ্রদ।
পিয়ার-রিভিউ না হওয়া এই প্রি-প্রিন্ট গবেষণায় দেখা গেছে, অভদ্র বা সরাসরি নির্দেশ দিলে এআই মডেলটি সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। যখন চ্যাটজিপিটিকে ‘এই, এটা খুঁজে বের করে দাও’ (Hey, gofer, figure this out) এমন ধরনের রূঢ় প্রম্পটের মাধ্যমে কিছু খুঁজে বের করতে বলা হয়, তখন এর নির্ভুলতার মাত্রা ৮৪.৮ শতাংশে দাঁড়ায়। আবার যখন একে ‘আপনি কি দয়া করে এই প্রশ্নটির সমাধান করে দিতে পারেন?’ —এমন প্রম্পটে কিছু জানতে চাওয়া হয় তাঁর নির্ভুলতার মাত্রা রূঢ় প্রম্পটের প্রায় ৪ শতাংশ কম।
গবেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেলগুলো প্রম্পটের ভাষার ধরন ও নির্দেশনার গঠন অনুযায়ী ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় বলে এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয়। এতে বোঝা যায়, মানুষ ও এআইয়ের মিথস্ক্রিয়ার জটিলতা আগে যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।
গবেষণার সহলেখক ও পেন স্টেটের অধ্যাপক অখিল কুমার বলেন, ‘একটি প্রশ্ন কীভাবে করা হচ্ছে, তার সামান্য পরিবর্তনও ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।’
তবে গবেষণায় সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, রূঢ় প্রম্পট ব্যবহার ক্ষতিকর যোগাযোগের অভ্যাসকে উৎসাহিত করতে পারে এবং এআই ব্যবহারে অন্তর্ভুক্তি ও সহজপ্রাপ্যতা ব্যাহত হতে পারে।
যদিও এই ধরনের নির্দেশনায় পারফরম্যান্সের কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এআইয়ের সঙ্গে কথোপকথনে ‘অশালীন বা অশোভন ভাষা’ ব্যবহারকে স্বাভাবিক করে তোলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, এআই চ্যাটবটগুলো ইনপুট বা নির্দেশনার মান ও টোনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কিছু ক্ষেত্রে বারবার নিম্নমানের কনটেন্টের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের উত্তর দেওয়ার দক্ষতা ধীরে ধীরে কমে গেছে। যাকে গবেষকেরা ‘ব্রেন রট’ বা মস্তিষ্কের ক্ষয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গবেষক অধ্যাপক অখিল কুমার ফরচুন ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে আমরা মানুষ-যন্ত্রের কথোপকথনমূলক ইন্টারফেস চাইছিলাম। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি, এমন ইন্টারফেসেরও কিছু সীমাবদ্ধতা ও নেতিবাচক দিক আছে এবং কাঠামোবদ্ধ এপিআই ব্যবহারেরও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।’
পেন স্টেটের এই গবেষণাটি কেবল এআইকে আমরা কী জিজ্ঞাসা করছি, তা নয়, বরং কীভাবে জিজ্ঞাসা করছি, সেটা বোঝার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এটি মানব-এআই মিথস্ক্রিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নৈতিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছে।