নিজের একটি বাড়ি হবে—এ স্বপ্ন দেখেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করলেই প্রথমে আসে রড-সিমেন্টের আকাশছোঁয়া দামের কথা।
এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি জাপানের একদল গবেষক আশার আলো দেখিয়েছেন। দেশটির কিতাকুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিসওয়ান্তি জুরাইদা এবং তাঁর সহকর্মীরা ইমারত তৈরির উপকরণ হিসেবে ফেলে দেওয়া ডায়াপার ব্যবহার করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীতে যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে সহজে ও ন্যূনতম খরচে ইমারত তৈরিতে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে ডায়াপার। একতলা বাড়ি তৈরি করতে অন্যান্য মালমসলার সঙ্গে যে পরিমাণ বালু প্রয়োজন হয়, তার বদলে ডায়াপার ব্যবহার করেছে জাপানি গবেষক দল।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ভাবছে, কীভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়। ডায়াপার ব্যবহার কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। তবে এই উপাদানকে ঘর তৈরির যোগ্য করতে যে পরিমাণ রাসায়নিক প্রয়োজন, তা-ও এক অন্য রকম চিন্তার কারণ। এ ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য ডায়াপার ব্যবহারে সমস্যা কমতে পারে অনেকটাই। উত্তর আমেরিকায় এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডায়াপার ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া সব দেশেই ডাস্টবিন বা যত্রতত্র ব্যবহৃত ডায়াপার ডাঁই করে রাখার দৃশ্য দেখা যায়। তার ফলে বাড়ে পানি ও মাটির দূষণ। এ সমস্যাও ঠেকাবে ইমারত নির্মাণের এই নতুন কৌশল।
সম্প্রতি গবেষক দল যে বাড়ি বানিয়েছে, তাতে দুটি শোয়ার কক্ষ, একটি শৌচাগার, স্নানাগার এবং একটি খাবারের জায়গা রয়েছে। নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ি তৈরির উপাদানের প্রায় ২৭ শতাংশজুড়েই রয়েছে এই ডায়াপার! তিনতলা বাড়ির ক্ষেত্রে উপাদানের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০ শতাংশ ডায়াপার ব্যবহার করা যেতে পারে। তা হলেই মজবুত থাকবে স্থাপনা।
বালুর বদলে সিমেন্টের সঙ্গে ফেলে দেওয়া ডায়াপারের মতো উপাদান ব্যবহার করলে বাড়ি তৈরির ব্যয় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা। যদিও বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়া ডায়াপার তুলে সঠিক পরিমাণে কংক্রিটের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেই চলবে না। এর মধ্যে থাকা প্লাস্টিককে জৈব ফাইবার থেকে আলাদা করার পদ্ধতি এখনো বেশ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন দেশের নির্মাণ আইনও যে এই ‘নোংরা’ উপাদান ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করবে, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সামগ্রিকভাবে স্থাপনা তৈরির উপাদান হিসেবে ফেলে দেওয়া ডায়াপার বেশ আশার আলো দেখিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, দ্য বিস্ট ও সায়েন্স নিউজ