অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধী চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় তিনজন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও ৯ জনকে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (এএফপি) কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট জানিয়েছেন, এই নতুন ও উদ্বেগজনক ‘লিঙ্গভিত্তিক’ সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার এক ভাষণে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন তিনি।
টার্গেট করা কিশোরীদের দিয়ে কী ধরনের কাজ করানো হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কমিশনার ব্যারেট বলেছেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা সহিংস উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ‘মজা করার জন্য’ মানুষকে আঘাত করতে চায়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিশের ঘরে থাকা তরুণ। যাদের বেশির ভাগ পশ্চিমা পটভূমি থেকে এসেছে। তারা রোবলক্সের মতো গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কিশোরী বা প্রাক্-কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করে।
কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট এদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ (crimefluencer) বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিরা নানা ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী, যার মধ্যে নিহিলিজম (জীবনের অর্থ অস্বীকার), স্যাডিজম (অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া), নাৎসিবাদ ও শয়তানবাদ অন্তর্ভুক্ত।
ব্যারেট বলেন, এই দলগুলোর সংস্কৃতি অনেকটা মাল্টিপ্লেয়ার বা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতির মতো। তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিকার খোঁজে, অনুসরণ করে এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের টেনে আনে।। তারা হয়তো তাদের আচরণের পরিণতি পুরোপুরি বোঝে না।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কগুলোর সদস্যদের প্রেরণা অর্থনৈতিক নয়, যৌন তৃপ্তির জন্যও নয়, একেবারেই তাদের বিনোদনের জন্য, মজা করার জন্য কিংবা অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা এসব করছে।’
কমিশনার ব্যারেট জানান, শুধু অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৬০ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ ফাইভ আইজ (Five Eyes) জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিলে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময়ে এই ঘোষণা এল। তবে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা থেকে বাইরে থাকবে গেমিং ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো।